উপাচার্য কলিমউল্লাহর ‘অনিয়ম-দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করলেন শিক্ষকেরা

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মতিউর রহমান। আজ শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি অভিযোগ তুলেছে শিক্ষকদের একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’–এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগসংবলিত ৭৬৮ পৃষ্ঠার একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আজ শনিবার বেলা ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মতিউর রহমান। এ সময় প্রায় ৫০ জন শিক্ষক–কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। আবার কখনো কখনো তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের এসব অভিযোগকে ‘উদ্ভট ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী প্রশাসক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত দল কাল রোববার (১৪ মার্চ) ক্যাম্পাসে আসছে। তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন বা শ্বেতপত্র প্রকাশের নাটক সাজানো হয়েছে।

অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ আদেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতি, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, এক ব্যক্তিকে ১০টি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা, ১৮ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে রেখে সময় হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া, আমিনুর রহমানের আত্মীয়কে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ, অর্থনীতি বিভাগে নিয়ম লঙ্ঘন করে পদোন্নতি, সিন্ডিকেটে বাতিলকৃত নিয়োগ বোর্ডের প্রার্থীকে গোপনে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ, বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগে শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়োগ, জনবল নিয়োগে ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা, বিধি লঙ্ঘন করে সাতটি বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য উপাচার্য নিজেই হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমান বলেন, নিয়মনীতি মেনেই তিনি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর তাঁর আত্মীয়র নিয়োগ হয়েছে আগের উপাচার্যের আমলে। সেটিও নিয়ম মেনেই হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগসংবলিত ৭৬৮ পৃষ্ঠার একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে ২২ বস্তা নথি পোড়ানো, ডায়েরি ক্যালেন্ডার মুদ্রণে অনিয়ম-দুর্নীতি, আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্যের একাধিক প্রশাসনিক পদ দখল, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামে বাণিজ্যিক ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, পিপিআর লঙ্ঘন করে ক্রয়প্রক্রিয়া, ভুয়া কাগজ দেখিয়ে বিল সমন্বয়, উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকলেও ২১ লাখ টাকা আপ্যায়ন বিল, প্রশিক্ষণ নেই তবু বিল দেখানোসহ উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিস চালু করা হয়েছে। উপাচার্য এই অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা, নিয়োগ বোর্ড, আপগ্রেডেশন বোর্ডসহ অসংখ্য সভা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা শুধু যাতায়াত বাবদ ব্যয় হয়েছে। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই বনিয়াদি প্রশিক্ষণ চালুর নামে আর্থিক অপচয় করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবের আহমেদ চৌধুরী রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হয়েও ফাউন্ডেশন কোর্সের সমন্বয়ক হয়েছেন। ইউজিসি এ কোর্স বন্ধ করতে নির্দেশনাও পাঠিয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশ মানা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং তাঁর মা নিলুফার বেগম। তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। তাঁরা দুজনেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় সভাপতি উপাচার্য নিজেই। ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অপরদিকে তাঁর মা নিলুফার বেগম বিষয় ‘বিশেষজ্ঞ’ সদস্য ছিলেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বোর্ডে একজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে একজনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থনীতি বিভাগে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পছন্দের শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে উপাচার্য নিজেই প্ল্যানিং কমিটির সদস্য হয়েছেন।