উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত থামাতে গণস্বাক্ষর, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহফুজ আল-আমিন এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, তাঁর নেতৃত্বে এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ১ হাজার ৫৭৬ জন স্বাক্ষর করেছেন।

তবে ওই গণস্বাক্ষরসংবলিত নথি ঘেঁটে দেখা দেখা গেছে, এই স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীর সরাসরি স্বাক্ষর রয়েছে। অধিকাংশের সমর্থন নিয়ে এই গণস্বাক্ষর করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা মাহফুজ আল-আমিন বলেন, এখন করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ জন্য হলে যাঁরা তাঁদের খুব কাছের পরিচিত ছিলেন, তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেকোনোভাবে যোগাযোগ করে তাঁদের (শিক্ষার্থী) সমর্থন নেবেন।

মাহফুজ আল-আমিনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপাচার্যের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলেও রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকায় গণশুনানির আয়োজন করে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই গণশুনানি অত্যন্ত অবমাননাকর, মানহানিকর ও অসম্মানজনক বলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখার জন্য যথাযথভাবে পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং ওই কমিটিকে ঘটনাস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ইউজিসির পক্ষপাতমূলক তদন্ত কমিটির তদন্ত কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সাবেক এক উপাচার্যের আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে।

কর্মসূচির সমন্বয়ক মাহফুজ আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আওয়ামী লীগপন্থী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সেহেতু এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্রলীগই তাঁর পাশে দাঁড়াবে। তবে এ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন।

বেশির ভাগ স্বাক্ষর সমর্থন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ জন্য হলে যাঁরা তাঁদের খুব কাছের পরিচিত ছিল, তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেকোনোভাবে যোগাযোগ করে তাঁদের (শিক্ষার্থী) সমর্থন নেবেন।  

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা মাহফুজ আল-আমিন আরও জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে গণস্বাক্ষরের বিষয়টি জানিয়ে দেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে তাঁদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এ কর্মসূচি শেষ হয় গত রোববার ১৯ অক্টোবর। মাসব্যাপী এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের শিক্ষার্থীরা এসে স্বাক্ষর করেন। আর বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানিয়ে দেন।

৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ১৭টি অভিযোগসংবলিত নথি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসি বরাবর পাঠানো হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৭ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি শুনানির আয়োজন করে।

গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ৩০০ পৃষ্ঠার ১৭টি অভিযোগসংবলিত নথি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসি বরাবর পাঠানো হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৭ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুনানির আয়োজন করে। এতে অভিযোগকারী পক্ষ হাজির হলেও উপাচার্য এম আবদুস সোবহান এই তদন্ত কমিটিকে এখতিয়ারবহির্ভূত দাবি করে যাননি। আর সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণ দেখিয়ে ওই শুনানিতে অংশ নেননি। এ বিষয়ে খুব শিগগির প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।