উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশের অনশন

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশের অনশন। প্রশাসনিক ভবনের সামনে, ২১ মার্চ দুপুর
ছবি: প্রথম আলো

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ অনশন শুরু করেছে। আজ রোববার সকাল থেকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে এ কর্মসূচি শুরু করে।

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এই অংশের দাবি, উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির সমর্থন না দেওয়ায় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন। অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে দিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। উপাচার্যর এই স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে।

এর আগে ১৬ মার্চ উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১০১টি অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম আবদুল আলীম প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এ নিয়ে এদিন প্রথম আলো অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কিছুদিন ধরেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচিতে উপাচার্য ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম আবদুল আলীমসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়ার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। এতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের এই অংশ নড়েচড়ে বসেছে। চলমান আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সকাল ৯টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ একত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন। সেখানে ব্যানার টাঙিয়ে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন।

অনশন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রক্টর আওয়াল কবির। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকসমাজের আহ্বায়ক রেদোয়ানুজ্জামান, সদস্যসচিব মাসুদ রানা, সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াহিয়া ব্যাপারীসহ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

অনশনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম রোস্তম আলী উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে গত তিন বছরে একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক বিষয়ে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে অস্বচ্ছতা ও ধীরগতি তৈরি করেছেন, ইচ্ছেমতো নকশা পরিবর্তন করে শহীদ মিনার নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কেনার আগেই জ্বালানি কেনার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়, দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিকে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ, ১০ কোটি টাকার বই কেনায় অসচ্ছতা, রূপপুরের বালিশ–কাণ্ডের ঠিকাদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ প্রদান, যোগদানের পর থেকে নিজের বাসভবনের ভাড়া ফাঁকি, রাজশাহীতে থাকা নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল ও ইন্টারনেট বিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান, শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানোসহ ১০১টি অনিয়ম করেছেন।

উপাচার্যের এসব অনিয়মের সমর্থন না দিয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি এম আবদুল আলীমসহ কয়েকজন শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে রেখেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। ফলে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারী আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। শিক্ষকদের পদোন্নতি ও মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক আওয়াল কবির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-বিএনপি সমর্থকেরা প্রশাসনে থেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে হয়রানি করছে। হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপশক্তি দমন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

শিক্ষক এম আবদুল আলীম বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি পাশাপাশি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত, সাম্প্রতিক নিরিক্ষায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তি উত্থাপন উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানে নেমেছে। নিজের অনিয়ম ঢাকতে তিনি শিক্ষকদের দায়ী করছেন। মামলা দিয়ে শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এটা কিছুতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাওয়া যায়নি। তবে চলামান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয় ই-মেইল বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষক আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রিজেন্ট বোর্ড তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রতিবেদন আসার পর তাঁর প্রমোশনের বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এখানে উপাচার্যের ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই। তাঁকে দোষারোপ করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুরোধ জানাচ্ছে।