‘এই উপহারই হামার ঈদের আনন্দ’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় দেওয়া ঈদ উপহার পেল নওগাঁর গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে নওগাঁর নিয়ামতপুরেপ্রথম আলো

‘হামি গরিব মানুষ। চায়ের স্টল কর‌্যা খাই। লকডাউনের জন্য হামার স্টল চলে না। হামার রোজগারও বন্ধ হয়্যা গ্যাছে। তাই সংসার চালাতে খুব হিমশিম খাছি। এ সময়ে আসতেছে ঈদ। হামার ঘরে ঈদের কোনো আনন্দ আছিল না। প্রথম আলো হামাঘেরে সাহায্য করোছে। স্কুলত থেকে হামার বেটি চারবার উপহার প্যালো। প্রথম আলোর এই উপহারই হামার ঘরের ঈদের আনন্দ।’

নওগাঁর গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু ইয়াসমিনের বাবা মোতাহার আলী কথাগুলো বলেন। মেয়ের ঈদ উপহার পাওয়ার খবর শুনে তিনিও এসেছিলেন। উপহার হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত তিনি।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালাতে আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় বিদ্যালয়ের ১৩৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ঈদ উপহার দেওয়া হয়। গত ঈদেও শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফরিদ আহমেদ। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূর আলম, সহকারী প্রধান শিক্ষক রাজিত দাসসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ঈদ উপহার পেয়ে জীবন আলীর চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে। সে বলে, ‘এগুলো দেখলে মা খুশি হবে।’

প্রথম আলোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, করোনার এই মহামারিতে বিধিনিষেধের কারণে অনেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এমন অবস্থায় প্রথম আলো ট্রাস্ট ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মাঝে বারবার ত্রাণ ও ঈদ উপহার প্রদান করতে দেখে তিনি মুগ্ধ। সরকারের পাশাপাশি প্রথম আলো ট্রাস্টও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এ জন্য প্রথম আলো বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

ঈদ উপহার হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছে নওগাঁর গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে নওগাঁর নিয়ামতপুরে
প্রথম আলো

পাঠশালার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জীবন আলীর বাবা নেই। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ হয় না। পাঠশালার প্রধান শিক্ষক শোনালেন জীবন আলীর পরিবারের গল্প। অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ট্রাস্টের ঈদ উপহার পেয়ে জীবন আলীর চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে। সে কত তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে এই উপহার তুলে দেবে, সেই চঞ্চলতা দেখা যায়। জীবন আলী বলে, ‘এগুলো দেখলে মা খুশি হবে।’

পাঠশালার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুনের বাবা দিনমজুর। পরিবারে পাঁচজন সদস্য। এই করোনাকালে কোনো দিন কাজ হয়, কোনো দিন হয় না। দিন কাটে অনেক কষ্টে। মাসুমা বলে, তাদের বাড়িতে ঈদে আলাদা করে কোনো আয়োজনই করা হয় না। গত ঈদে প্রথম আলো ট্রাস্টের উপহারেই ঈদ হয়েছে। এবারও এই উপহারেই তাদের ঈদ হবে।