‘এক ঠেলায় বন্যার পানি আইয়া সব মেছাকার কইরা দিছে’

কমর আলী ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা বেগম ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

কমর আলীর বয়স ৬৫ বছর। তাঁর জীবদ্দশায় এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি। তিনি বললেন, ‘এই পানি জীবনেও দেখছি না! এক ঠেলায় বন্যার পানি আইয়া সব মেছাকার কইরা দিছে! ঘরের কাপড়চোপড়, তোশক, বালিশসহ কিছু জিনিসপত্র বাঁচাইতাম পারছি। ডেক-ডেকচি, থালা-বাসন ভাসি গেছে। সব খুইয়া অসহায় অই গেছি!’

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আফজলাবাদ বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন কমর আলী ও তাঁর পরিবার। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আলাদা থাকেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন স্ত্রী, ১ ছেলে, ২ মেয়েসহ ১০ জন আছেন। ছোট ছেলে রংমিস্ত্রি। মূলত তাঁর আয়েই সংসার চলে। ছেলে যে দোকানে কাজ করেন, সেটিও বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই কাজ বন্ধ, আয়ও নেই।

গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও কমর আলীর ঘরের সামনে এখনো হাঁটুপানি। ঘরের ভেতরে কয়েক ইঞ্চি কাদা জমে আছে। নানা রকমের ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে আছে। পুরো ঘরটিই বিধ্বস্ত হয়ে আছে। সে ঘরই কমর আলী ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা বেগম (৫১) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছিলেন।

রেবেকা বেগম বলেন, ‘ঘরে কোমরপানি আছিল। কয়েক দিন ধইরা যাযাবর জীবন কাটাইছি। এখন ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে করতে জান শেষ! হাড্ডিগুড্ডিতে ব্যথা করতাছে। বন্যার পানি ক্ষতি তো করছেই, কাম আরও বাড়াইয়া দিয়া গেছে। কেমনে কাদামাটি সরাইমু, ঘর পরিষ্কার করমু, ইতা ভাবলেই মাথা চক্কর দিয়া ওঠে।’

কমর আলী বলেন, ‘আমি নিজে অসুস্থ। ছেলের আয় বন্ধ। অনেক জিনিস নষ্ট হইছে, ভাইসা গেছে। ঘরে খরচও বাড়ছে। ঋণের বোঝা বাড়ছে। সরকারি কোনো ত্রাণ বা সহযোগিতাও পাইছি না। কিলা সামনের দিন যাইব, ভাবতে ভাবতে বেদিশা হইয়া গেছি।’