এক পায়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান রোজিনা

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় এক পায়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান রোজিনা
প্রথম আলো

‘মামা আসেন। ভাড়া বেশি লমু না। কোথায় যাবেন বলেন, পৌঁছে দিয়া আসি।’ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ শহরে রিকশায় চালকের আসনে বসা নারীর ডাক শুনে কাছে যেতেই দেখা গেল, তাঁর একটি পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। আরেক পায়ে রিকশা চালান।

কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম রোজিনা বেগম। স্বামী নেই। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনজনের সংসার চালান ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে। তিন মাস ধরে উপজেলায় এই কাজ করছেন তিনি। উপজেলার একটি ভাড়া বাসায় তাঁর সংসার। তিনি বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। ৭ বছর বয়সে টাইফয়েডে তাঁর বাম পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। অল্প বয়সে বরিশালের মুলাদী উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের অটোরিকশার চালক সুমন খানের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে তিনি ঢাকার মিরপুরে থাকতেন। ৬ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বামী মারা যান। সাত বছরের মেয়ে রিতু ও চার বছরের ছেলে হৃদয়কে নিয়ে কঠিন বিপদে পড়েন তিনি।

রোজিনা বলতে থাকেন, একসময় ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। ব্যয়ের তুলনায় আয় সামান্য হওয়ায় চলে আসেন মির্জাগঞ্জে। প্রথম দিকে কেউ তাঁকে ভাড়ায় রিকশা দিতে রাজি হতেন না। ৩ মাস আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে দিনে ২০০ টাকা ভাড়ায় রিকশা নিয়ে নতুনভাবে জীবনসংগ্রাম শুরু হয় রোজিনার।

তবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত নারী হিসেবে প্রতিনিয়তই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বলে রোজিনা জানান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আমাকে নারী রিকশাচালক হিসেবে দেখে অনেক যাত্রী ভরসা করতে পারেন না। তাই যাত্রী কম হয়। সারা দিন টানা রিকশা চালাতে পারি না। সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে আসতে হয়। যতটুকুই চালাই রিকশার মালিককে জমা দিতে হয় ২০০ টাকা। এরপর ১৫০–২০০ টাকা থাকে। ছেলে হৃদয়কে স্থানীয় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছি। মেয়ে রিতু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। নিজের একটা রিকশা থাকলে কিছু টাকা জমানো সম্ভব হতো। ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুই বেলা খেয়ে–পরে বাঁচতে পারতাম।’

স্থানীয় রিকশাচালক মো. করিম বলেন, ‘আমরা পুরুষরা সারা দিন রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাই। রোজিনার জন্য কাজটি আরও কঠিন।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘একজন প্রতিবন্ধী মা হয়ে ভিক্ষা না করে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন রোজিনা। তাঁকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। সমাজে যাঁরা রোজিনার মতো সংগ্রামী জীবন যাপন করছেন, তাঁদের সাহায্যে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।’