এক সাইনবোর্ডেই বছর পার

সিটি করপোরেশনের আইসিটি ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে লাগানো সাইনবোর্ড। গত বৃহস্পতিবারের ছবি।  প্রথম আলো
সিটি করপোরেশনের আইসিটি ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে লাগানো সাইনবোর্ড। গত বৃহস্পতিবারের ছবি। প্রথম আলো

‘সিলেট হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগর’—গত বছরের ২৮ এপ্রিল এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এর পরপরই সিলেট নগরের হকার্স মার্কেটের পাশে সিটি করপোরেশন প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করা হয়। সেখানে সাঁটানো হয় একটি সাইনবোর্ড। যাতে লেখা: ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে আইসিটি ভবন ও মার্কেট নির্মাণের নির্ধারিত স্থান’।

এক সাইনবোর্ডেই বছর পেরিয়েছে। কিন্তু ভবন ও মার্কেট নির্মাণে আর কোনো কাজ এগোয়নি।

গত বছরের ২৭ এপ্রিল তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির একটি অনুষ্ঠানে সিলেট এসেছিলেন। কোম্পানীগঞ্জে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানিয়েছিলেন, সিলেট দেশের প্রথম ডিজিটাল নগর হবে। ডিজিটাল নগর উপযোগী সিটি করপোরেশনের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর পরামর্শ দেওয়ায় ওই অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে প্রস্তাবিত একটি স্থান সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করে ধোপাদিঘিরপাড় এলাকার হকার্স মার্কেটের জায়গায় আইসিটি ভবনের সাইনবোর্ড সাঁটনো হয়েছিল।

পরিদর্শনকালে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকম প্রস্তুতি নিতে হবে। কোম্পানীগঞ্জে হাইটেক সিটি স্থাপনের কাজ চলছে। একই সঙ্গে সিলেট নগরে তথ্যপ্রযুক্তিব্যবস্থাকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে চেষ্টা করা হবে। ডিজিটাল নগর হলে সারা সিলেটে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটার ব্যবসায়ীদেরও এক জায়গায় জড়ো করা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রায় ৮৬ শতক ওই জায়গায় ১২ তলা ভবনে বিভিন্ন স্তরে কম্পিউটারসহ, তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা, সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, ই-কমার্স সংক্রান্ত যাবতীয় সুযোগ–সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

সম্প্রতি হকার্স মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক বছর আগে যে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছিল, সেটিই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশের জায়গা সাইনবোর্ড সাঁটানোর সময় সংরক্ষণ করা হলেও সেটি আর সেভাবে দেখা যায়নি। সাইনবোর্ডের পেছন দিক যানবাহনের স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশে বসেছে পানের দোকান। বাকি জায়গা ফুটপাতের নানা রকম পসরার দখলের মতো দেখা গেছে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সিলেটের সভাপতি এনামূল কুদ্দুস চৌধুরী তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রীর পরিদর্শনকালে সঙ্গে ছিলেন। যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গত এক বছরে এ বিষয়ে কম্পিউটার সমিতি আর কোনো পদক্ষেপ বিষয়ে অবহিত নয়। তিনি বলেন, ‘আইসিটি ভবন হলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পাশাপাশি কম্পিউটার ব্যবসার অন্য রকম এক প্রসারও হতো। কিন্তু এক বছর পর শুধু সাইনবোর্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এ নিয়ে হতাশা ছাড়া আর কিছু এখন দেখা যাচ্ছে না।’

আইসিটি ভবন প্রস্তাব ও পরিকল্পনার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্ট ছিল। প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্কের সঙ্গে সিলেট সিটির আইসিটি ভবন নির্মাণকাজের সামঞ্জস্য রাখতে এ কাজটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। এ কথা সত্য যে এ বিষয়ে গত এক বছরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে জায়গাটি আইসিটি ভবনের জন্য প্রস্তাবিত করে রাখা হয়েছে। উচ্চপর্যায় থেকে যখনই সিটি করপোরেশনকে অবহিত করবে, তখনই সবকিছু উপস্থাপন করা হবে, এ রকম প্রস্তুতি সিটি করপোরেশনের রয়েছে।