একই আদালতে দুই মামলার বিচারকার্যের আবেদন খারিজ

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা একই আদালতে বিচারকার্যের আবেদন করেছে মামলার বাদীপক্ষ। তবে আদালত এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। রোববার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখে এই আবেদন করায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরী আবেদনটি খারিজ করে আগামী বুধবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রাশেদা সাঈদা খানম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবী ধর্ষণ ও ছিনতাই মামলা একই আদালতে একসঙ্গে বিচারকাজ শুরু করার আবেদন করেন। এ জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক তা খারিজ করে আগামী বুধবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দেন।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক তরুণীকে (২০) দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী বাদী হয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।

ঘটনার পর আসামিরা ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‍্যাব। গ্রেপ্তারের পর আটজন আসামিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ও মাহফুজুরকে ধর্ষণে সহায়তা করতে অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলার অভিযোগপত্রে ঘটনার পর আসামিদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন পর্যায় প্রত্যক্ষ করা দুজনসহ ৫১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ৩ ডিসেম্বর আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে প্রথম শুনানি হয় ৩ জানুয়ারি। ওই দিন বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় সময় প্রার্থনা করলে আদালত মঞ্জুর করেন। ১০ জানুয়ারি বাদীপক্ষের আইনজীবী অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য নথিপত্র হস্তান্তর করার আবেদন করে সময় চাইলে আদালত দুই দিনের সময় নির্ধারণ করে দেন। দুদিন পর বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতকে অভিযোগপত্রে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে ১৭ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করে প্রথম দফায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রোববার নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।

আসামিদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য মামলার আটজন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী সাক্ষ্য গ্রহণ সাময়িক স্থগিত রেখে দুটি মামলা একই আদালতে একই সঙ্গে বিচারকার্য শুরুর আবেদন করায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

এ ব্যাপারে বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের আগে তাঁর স্বামীকে মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়। ধর্ষণ মামলার আট আসামিই এই মামলার আসামি। এতে ধর্ষণ মামলার সাক্ষীদেরও সাক্ষী রাখা হয়। একই ঘটনার পৃথক দুটি মামলা দুটো আদালতে চললে বিচারকার্য বিলম্বিত হতে পারে। বিচারপ্রার্থীর স্বার্থে দ্রুত বিচারকার্যে আমরা এই ট্রাইব্যুনালেই দুটো মামলা একসঙ্গে চলার আবেদন করে সাক্ষ্য গ্রহণ সাময়িক স্থগিত রাখতে বলেছিলাম। শুনানি শেষে বিচারক আমাদের আবেদন খারিজ করে ২৭ জানুয়ারি থেকে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন।’