একটি বিড়ালছানার জন্য...
খেলতে খেলতে ড্রেনে পড়ে যায় একটি বিড়ালছানা। আটকা পড়ে ড্রেনের ঢাকনার নিচে। কিছুতেই বের হওয়ার পথ পাচ্ছিল না ছানাটি। সন্তানের এমন অবস্থায় ড্রেনের ওপর বসে কাঁদছিল মা বিড়ালটি।
বিষয়টি জানতে পারেন প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা তরুণদের সংগঠন ‘ভয়েস ফর ভয়েসলেস’ সদস্যরা। ছানাটি উদ্ধারে মাঠে নামেন তাঁরা। ভাঙতে যান ড্রেনের ঢাকনা। কিন্তু বাদ সাধেন মহল্লাবাসী। উপায় না পেয়ে ওই তরুণেরা খুদে বার্তায় বিষয়টি পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানান। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বিড়ালছানাটি উদ্ধার করেন।
গতকাল রোববার রাতে পাবনার শালগাড়িয়া মহল্লার ইংলিশ রোডে এ ঘটনা ঘটে। পরে ড্রেন থেকে উদ্ধারের পর বিড়ালছানাটিকে পরিষ্কার করে মা বিড়ালটির কাছে পৌঁছে দেন ওই তরুণেরা।
ভয়েস ফর ভয়েসলেসের সদস্য রেজওয়ান শাহরিয়ার বলেন, করোনার কারণে কুকুর, বিড়ালসহ বহু প্রাণী অভুক্ত দিন কাটাচ্ছে। এসব প্রাণীকে খাবার দিতে তাঁদের সংগঠন কাজ করে। ফলে শহরের অনেক মানুষই এখন তাঁদের চেনেন। বিড়ালছানাটি ড্রেনে আটকে পড়লে মহল্লার কয়েকজন তরুণ তাঁদের খবর দেন। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে তিনি ও তাঁর বন্ধু এজাজ মোহাম্মদ সেখানে যান। ড্রেনের ঢাকনা ভেঙে বিড়ালছানাটিকে উদ্ধার করতে গেলে মহল্লাবাসীর বাধার মুখে তাঁরা বিষয়টি পাবনার পুলিশ সুপারকে মহিবুল ইসলাম খানকে জানান।
ভয়েস অব ভয়েসলেসের সদস্যরা বহু ভালো কাজ করছেন। রাতে আমি ওদের রাস্তায় কুকুর–বিড়ালকে খাবার দিতে দেখেছি। বিড়ালছানা উদ্ধারে আমি ওদের পাশে থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি।
এসপি মহিবুল বিষয়টি পাবনা সদর থানা–পুলিশকে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানা–পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ড্রেন থেকে বিড়ালছানাটিকে উদ্ধার করেন।
রেজওয়ান শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধারের পর তাঁরা দুই বন্ধু বিড়ালছানাটিকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে মা বিড়ালের কাছে পৌঁছে দেন। পরে মা বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়।
জেলার বন্য প্রাণিবিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিড়ালছানা উদ্ধারে দুজন তরুণ ও পাবনার এসপির উদ্যোগ প্রশংসনীয়। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও চরম আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। পুরো বিষয়টি মানবিকতার বড় উদাহরণ।
পাবনার এসপি মহিবুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বহু তরুণ বাজে আড্ডায় মেতে থাকেন। অনেক কিছু দেখেও তাঁরা দেখেন না। ভয়েস অব ভয়েসলেসের সদস্যরা বহু ভালো কাজ করছেন। রাতে আমি ওদের রাস্তায় কুকুর–বিড়ালকে খাবার দিতে দেখেছি। তাই বিড়ালছানা উদ্ধারে আমি ওদের পাশে থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি।’