একটি সেতু ঘিরে মানুষের এত আগ্রহ-উচ্ছ্বাস আগে দেখিনি

যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পায়রা সেতু। এর মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে কুয়াকাটার যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন হলো। গতকাল রোববার পায়রা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সেতুর প্রকল্প পরিচালক সড়ক ও জনপথের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল হালিমের সঙ্গে।

পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল হালিম
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বপ্নের পায়রা সেতু তো চালু হলো। সেতুটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আপনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এখন চালু হওয়ার পর কেমন লাগছে?

আবদুল হালিম: একটি সেতু ঘিরে যে একটি এলাকার মানুষের এতটা আগ্রহ-উচ্ছ্বাস থাকতে পারে, সেটা অভাবনীয়। আমি আগে দেখিনি, রোববার দেখেছি। বুকটা ভরে গেছে। সব কষ্ট, পরিশ্রম ম্লান হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি গর্বিত দেশের এত বড় একটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশের দশটি মেগা প্রকল্পের একটি পায়রা সেতু। এটি বাস্তবায়নে কয়েক দফা সময় বাড়াতে হয়েছে। এর পেছনে কারণ কী?

আবদুল হালিম: দেখুন, একটি প্রকল্পের প্রাথমিক ডিজাইন, প্রাক্কলন তৈরি হয় এক রকম, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তা হেরফের হয়। এই সেতুর ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। এটা ব্যতিক্রম নয়। পায়রা একটি খরস্রোতা নদী। তা ছাড়া এই নদীর সঙ্গে পায়রা বন্দরের নৌ চলাচলের যোগসূত্র আছে। পাশাপাশি নদীভাঙন, প্রকৃতি—সেগুলো আমরা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছি। এতে অনেক সময় লেগেছে, ব্যয়ও দফায় দফায় বেড়েছে। প্রথমে আমাদের পাইলের দৈর্ঘ্য ছিল ৭০ মিটার। কিন্তু গভীরতা বেশি হওয়ায় তা ১৩০ মিটার করতে হয়েছে। এটা দেশের দীর্ঘতম পাইল। জমি অধিগ্রহণেও অনেক সময় লেগেছে। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটা পিছিয়ে যাই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এটি দেশের অন্যতম নান্দনিক নকশার সেতু। এর নকশা করেছেন কারা?

আবদুল হালিম: মূলত দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এর নকশা করেছে। কোরিয়া, ভারত ও কুয়েত এর মধ্যে অন্যতম। তবে নেতৃত্ব দিয়েছে ভারতের ইন্টারকন্টিনেন্টাল কনসাল অ্যান্ড টেকনোক্র্যাট প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই সেতুর স্থলে কয়েক যুগ ধরে ফেরি ছিল, যেটি লেবুখালী ফেরিঘাট নামে পরিচিত। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবিকা ছিল। সেতু চালু হওয়ায় তাঁরা ব্যবসা গুটিয়ে দুর্দশায় পড়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ আছে কি?

আবদুল হালিম: আমাদের এ প্রকল্পে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। মূলত, এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যেসব প্রকল্প থাকে, সেখানে এ ধরনের গাইডলাইন থাকে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উন্নয়ন-সহযোগীদের তেমন গাইডলাইন নেই। তবে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

আবদুল হালিম: আপনাকেও ধন্যবাদ।