একটি হুইলচেয়ারের জন্য আকুতি দুর্ঘটনায় আহত যুবকের

হুইলচেয়ার পাওয়ার আশায় বড় ভাই হাফিজার রহমানের ভ্যানে চড়ে ছাইদুল উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করতে যান। আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, ১৭ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারীপাড়ার ছাইদুল ইসলাম (৩৩) দরজি দোকানে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। এখন তিনি কোনো কাজই করতে পারেন না। একটি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে তাঁর শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে।

বর্তমানে এমন অবস্থা, অন্যের সাহায্য ছাড়া বসতেও পারেন না। একা একা চলতে প্রায় মাসখানেক ধরে একটি হুইলচেয়ারের জন্য বিভিন্নজনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ছাইদুল। কিন্তু কেউ তাঁর সেই আকুতিতে সাড়া দেননি। তাই বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনায় আহত এই যুবককে হুইলচেয়ার ছাড়া দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

স্বজন ও গ্রামবাসী জানান, ছাইদুল ইসলাম বিবাহিত। মুহিত নামে ছয় বছরের সন্তান আছে তাঁর। প্রায় চার বছর আগে ছাইদুলকে তাঁর স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন। আক্কেলপুর উপজেলা সদরের একটি দরজির দোকানে এমব্রয়ডারির কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। ছয় মাস আগে একদিন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে রেললাইনে বসে আরাম করছিলেন ছাইদুল। এ সময় তিনি ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর থেকে ছাইদুলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এখন একা চলতে পারেন না। তাঁর বড় ভাই ভ্যানচালক হাফিজার রহমানের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।

হাফিজার রহমান বলেন, ‘ছাইদুল একা চলতে পারে না। হুইলচেয়ার পেলে সে একাই অন্তত বাড়িতে চলাফেরা করতে পারত। আমরা গরিব মানুষ। হুইলচেয়ার কেনার সামর্থ্য নাই। হুইলচেয়ারের জন্য অনেককেই বলেছি। কিন্তু এখনো জোগাড় করতে পারি নাই।’

রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ভান্ডারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এস এম ফরিদ হায়দার বলেন, ছাইদুল একজন হতদরিদ্র মানুষ। তিনি ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়েছেন। এখন একা চলতে পারেন না। ইউনিয়ন পরিষদে হুইলচেয়ারের বরাদ্দ নেই। ফলে তাঁর হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা যায়নি।

হুইলচেয়ার পাওয়ার আশায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাই হাফিজার রহমানের ভ্যানে চড়ে ছাইদুল আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কিন্তু ইউএনওর দেখা না পেয়ে তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। উপজেলা চত্বরে ছাইদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ যে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তাঁর মুখ দিয়ে লালা পড়ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ শুক্রবার ইউএনও হাবিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল এ রকম কারও সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। নাম–ঠিকানা পেলে তাঁকে সরকারিভাবে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে।