এখনো বকেয়া পাননি পিআইসির সদস্যরা

আট মাস আগে কাজ শেষ করেও চতুর্থ কিস্তির টাকা না পেয়ে অনেককে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

পাউবো

হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় ১৭৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা এখনো চতুর্থ কিস্তির টাকা পাননি। অথচ আসন্ন বোরো মৌসুমে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের জন্য আজ সোমবার থেকে বাঁধের জরিপ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সুনামগঞ্জ পাউবো, উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধরমপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, কাইলানী, ঘোড়াডোবা, জয়ধনা, গুরমা, সোনামড়ল, ধানকুনিয়া ও গুরমার বর্ধিতাংশ—এই আট হাওর সুনামগঞ্জ পাউবোর অধীনে রয়েছে। ৮টি হাওরপারের কৃষকদের নিয়ে ১৭৯টি পিআইসি গঠন করা হয়। প্রকল্পকাজের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে তাঁদের দেওয়া হয়েছে ২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হয়েছে ১৫ মার্চ। চূড়ান্ত বিলের (চতুর্থ কিস্তির) টাকা পরিশোধ করার জন্য উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটি সভা করে সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির কাছে গত ২৫ মে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু এই সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি।

চন্দ্র সোনার থাল হাওরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কৃষক মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পকাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২২ লাখ টাকা। টাকা পেয়েছি মাত্র ১২ লাখ। বাকি ১০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। গরু বিক্রি করে ও জমি বন্ধক দিয়ে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধ করেছি। যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আছি।’ তিনি আরও বলেন, চতুর্থ কিস্তির টাকা না পেয়ে অনেক পিআইসির সদস্যকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধরমপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কৃষক আলা উদ্দিন বলেন, বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও পিআইসি সদস্যদের বকেয়া চতুর্থ কিস্তির টাকাই এখনো পরিশোধ করা হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দু–এক দিনের মধ্যে পিআইসিদের বকেয়া টাকা ছাড় হয়ে যাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে পিআইসিদের বকেয়া চূড়ান্ত বিলের টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে। আগামী বোরো মৌসুমে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় পাউবোর অধীনে থাকা জেলার সব কটি হাওরের বাঁধে আজ থেকে জরিপকাজ শুরু করা হবে।