এগিয়ে পঞ্চগড়, পিছিয়ে ময়মনসিংহ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজনকে টিকার জন্য নিবন্ধনে উৎসাহিত করতে জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রথম ধাপে পৌঁছানো করোনার টিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে পঞ্চগড় জেলায়। আর ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে কম প্রায় ২১ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—এই তিন পার্বত্য জেলায় প্রথম ধাপে পৌঁছানো ১২ হাজার টিকার শতভাগ দেওয়া হয়ে গেছে। টিকা না থাকায় বান্দরবান সদর উপজেলায় আজ শনিবার টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জেলার মানুষের মধ্যে এখনো নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন টিকার নিবন্ধন করছেন কম। লোকজনকে টিকা নিতে উৎসাহিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণটিকাদান চলছে। সারা দেশে ১ হাজারের বেশি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন।

ঢাকা বিভাগে প্রথম ধাপে পৌঁছানো টিকার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায়। আর সবচেয়ে কম দেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। নারায়ণগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ৫৬ হাজার ৮১১ জনকে। এই জেলায় প্রথম ধাপে টিকা পৌঁছেছে ১ লাখ ৫৬ হাজার।

নারায়ণগঞ্জ জেলার করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শুরুর দিকে লোকজন টিকা নিতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কিছুটা কম।

পার্বত্য তিন জেলায় টিকা শেষ

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ফেনী জেলায় আর সবচেয়ে কম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। প্রথম ধাপে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—এই তিন জেলায় ১২ হাজার করে টিকা পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন জেলাতেই কম-বেশি ১৪ হাজার করে টিকা দেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি জেলার জন্য চট্টগ্রামের রাউজান এবং বান্দরবান জেলার জন্য চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলা থেকে অতিরিক্ত টিকা সংগ্রহ করে কার্যক্রম চালিয়েছে।

বান্দরবানের করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, টিকা না থাকায় জেলা সদরে আপাতত কার্যক্রম বন্ধ। অন্য উপজেলায় টিকা থাকা সাপেক্ষে কার্যক্রম চলবে।

জেলা পর্যায়ে টিকা পাঠানোর কার্যক্রম সমন্বয় করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এই কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিন পার্বত্য জেলা প্রথমে টিকার চাহিদা কম দিয়েছিল। দুই-এক দিনের মধ্যে সেখানে টিকা পৌঁছে যাবে।

টিকা দেওয়ায় পিছিয়ে ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ বিভাগের সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায়। এ জেলায় প্রথম ধাপে টিকা পৌঁছেছে ৩ লাখ ২৪ হাজার। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ৬৭ হাজার ৮৩৪ জনকে। শতাংশের হিসাবে টিকা পেয়েছেন ২০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন এ বি এম মসিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, টিকা নিতে লোকজনকে উৎসাহিত করতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যাঁরা বয়স্ক ভাতা পান তাঁদের সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। জেলার আনসার সদস্য ও স্কুলের শিক্ষকদের টিকা নিতে বলা হয়েছে।

অতিরিক্ত টিকা পৌঁছেছে পঞ্চগড়ে

রংপুর বিভাগে প্রথম ধাপে পৌঁছানো টিকার বিপরীতে সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে রংপুর জেলায় (২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ)। পঞ্চগড় জেলায় প্রথম ধাপে টিকা পৌঁছায় ২৪ হাজার। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৭১১ জনকে। অর্থাৎ, প্রায় ৯৯ শতাংশ টিকাই দেওয়া হয়ে গেছে। প্রথম ধাপে পাওয়া টিকা দ্রুত শেষ হয়ে আসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে আরও ৮ হাজার ডোজ টিকা পাঠানো হয়।

পঞ্চগড়ের সিভিল ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টিকা নিয়ে পঞ্চগড়ের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা কম। শুরু থেকেই মানুষ বেশ উৎসাহ নিয়ে টিকা নিয়েছে।

প্রান্তিক এলাকায় আগ্রহ কম

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে প্রথম ধাপে পৌঁছানো টিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে জয়পুরহাট জেলায়। আর সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলায় (৩৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ)। সিরাজগঞ্জে প্রথম ধাপে ৯৬ হাজার টিকা পৌঁছেছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪৯৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলার চরাঞ্চল এলাকার লোকজনের মধ্যে করোনার টিকা নিয়ে আগ্রহ কম। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও, স্থানীয় নেতা ও ইমামদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। মসজিদে প্রচার চালানো হচ্ছে। আগের চেয়ে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে।

মৌলভীবাজারে দেওয়া হয়েছে ৮০ শতাংশ টিকা

সিলেট জেলায় প্রথম ধাপে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ করোনার টিকা পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৭ হাজার ২৯ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কম হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় প্রথম ধাপে পৌঁছানো টিকার ৮০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার মানুষের মধ্যে শুরু থেকেই উৎসাহ ছিল। জেলায় প্রবাসী পরিবার বেশি, তাঁদের টিকা নিয়ে বেশি আগ্রহ ছিল। জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা লোকজনকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন।

বরাদ্দে এগিয়ে, টিকা দেওয়ায় পিছিয়ে

প্রথম ধাপে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৬৮ হাজার টিকা পৌঁছেছে বরিশাল জেলায়। বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে বরিশাল জেলাতেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বরিশালে টিকা দেওয়া হয়েছে ৪২ হাজার ১৪২ জনকে (২৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ)। বরাদ্দের তুলনায় সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে, ৮৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে প্রথম ধাপে সবচেয়ে কম ১২ হাজার টিকা পৌঁছায় মেহেরপুরে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই টিকার প্রায় ৮৪ শতাংশই দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে মাগুরা জেলায়। আর সবচেয়ে কম ৪৪ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে সাতক্ষীরায়।