এবার আর কাউকে ‘ম্যানেজ’ করতে হচ্ছে না

মাগুরা জেলার একমাত্র মাগুরা পৌরসভার ভোট গ্রহণ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জানুয়ারি। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও পৌরসভার সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন খুরশিদ হায়দার।

প্রশ্ন :

কেমন আছেন? নির্বাচনী প্রচারণা কেমন চলছে?

খুরশিদ হায়দার: ভালো আছি। রিল্যাক্সে আছি। কোনো তাপ জ্বালা নেই। দল থেকে নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়েছে, কর্মীরা মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। দল থেকে যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সে অনুযায়ী কাজ করছি।

প্রশ্ন :

২০১৩ সালে আপনার বাবা তৎকালীন মেয়র আলতাফ হোসেনের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আপনি প্রার্থী হয়েছিলেন। দলীয় সমর্থন ছিল, তারপরও পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৩ ও ২০২১ সালের নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য কী?

খুরশিদ হায়দার: আকাশ–পাতাল পার্থক্য। ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে অনেক মানুষের কাছে যেতে হয়েছিল। অনেক মানুষকে ম্যানেজ করতে হয়েছিল। এবার আর কাউকে ম্যানেজ করতে হচ্ছে না। কেউ টাকা নিতে আসছে না। কেউ টাকা চাইতে এলে বলছি, পাঁচ বছর ধরে কাজ করেছি, যদি নির্বাচিত হই আবার নতুন করে শুরু করব। কারও কোনো চাহিদা নেই। সবাই নিজ দায়িত্বে রাত–দিন ভোট চাচ্ছেন আমার পক্ষে। এমনকি অন্য দলের অনেক নেতা–কর্মী আমার জন্য কাজ করছেন।

প্রশ্ন :

গত পাঁচ বছরে আপনার হাত দিয়ে মাগুরা পৌরসভায় কী কী পরিবর্তন এল?

খুরশিদ হায়দার: পৌর এলাকায় কোনো শিশুপার্ক ছিল না। একটি শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট পুনর্নির্মাণ, পুরাতন ও নতুন বাজারের স্থাপনা সংস্কার এবং কয়েকটি গণশৌচাগারের কাজ চলমান রয়েছে। ৩৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা, ৬ কিলোমিটার নতুন পানির লাইনসহ বহু রাস্তা, ড্রেন ও পানির সংযোগ সংস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কবাতি, শহরের সৌন্দর্যবর্ধসহ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে।

প্রশ্ন :

এবার মেয়র নির্বাচিত হলে কী কী কাজে হাত দেবেন?

খুরশিদ হায়দার: নবগঙ্গা নদীর ওপর পূর্বাশা হল ঘাটে ও কাশীনাথপুর গ্রামে দুটি সেতু করার উদ্যোগ নেব। ভায়নার মোড়ে বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে। শহরের রাস্তায় ডিভাইডার স্থাপন করা হবে।

প্রশ্ন :

আপনি ছাড়াও মেয়র পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশেষ করে বিএনপি মনোনীত এই প্রার্থীর কাছেই ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে আপনি পরাজিত হয়েছিলেন। কেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করছেন?

খুরশিদ হায়দার: ২০১৬ সালে তাঁকে (বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর) পরাজিত করেই নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকেই একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। পরিস্থিতি বদলে গেছে। বিএনপি প্রার্থীকে তাঁর দল থেকেই বলা হয় অতিথি পাখি। যাঁকে কেবল নির্বাচন এলেই দেখা যায়। তাঁর দলের নেতা–কর্মীরাই গ্রহণ করতে পারছেন না, তো জনগণ কীভাবে নেবেন? আমি ও আমার দল মানুষের সঙ্গে আছি সব সময়। তাই এখানে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার জয় হবে।

প্রশ্ন :

‘অনুকূল’ পরিবেশে কি নির্বাচনে ঢিল দিচ্ছেন?

খুরশিদ হায়দার: প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিদিন একাধিক পথসভা, উঠান বৈঠক করছি। এই সপ্তাহে প্রচারণার গতি আরও বাড়বে।

প্রশ্ন :

অভিযোগ রয়েছে, আপনারা নানাভাবে বিরোধী পক্ষকে কোণঠাসা করে রাখতে চাইছেন। আচরণবিধি কি মানছেন?

খুরশিদ হায়দার: কারও ওপরই আমরা বল প্রয়োগ করছি না। এখানে নির্বাচনের দারুণ পরিবেশ রয়েছে। আগেই বলেছি, বিএনপি প্রার্থীকে তাঁর দলের অনেক নেতাই মেনে নিচ্ছেন না। আর আচরণবিধি মেনেই আমরা প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছি। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এখানে ভোট হবে বলে আশা করছি।

প্রশ্ন :

নির্বাচিত হলে উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি কোন বিষয়ে আপনার বেশি নজর থাকবে?

খুরশিদ হায়দার: সবচেয়ে প্রথম যে কাজটা করতে চাই, মানুষের সুবিধা–অসুবিধা জানতে দলমত–নির্বিশেষে নাগরিক কমিটি গঠন করতে চাই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সম্প্রীতির মাগুরা গড়তে চাই।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
খুরশিদ হায়দার: আপনাকেও ধন্যবাদ।