এবার ইউএনওর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করলেন আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাঁর বাসভবন চত্বরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বর্তমান ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর থেকে উপজেলাটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। প্রতিটি কাজেই উৎকোচ আদায় করা হয়। তাঁর অনিয়ম–দুর্নীতিতে ঠিকাদার, ইউপি চেয়ারম্যান, অধস্তন কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস এ সময় ইউএনওর অনিয়ম–দুর্নীতিসংক্রান্ত সাতটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপস্থাপন করেন।
আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর থেকে উপজেলাটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। প্রতিটি কাজেই উৎকোচ আদায় করা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর বিরুদ্ধে ইউএনওসহ উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ১২ নভেম্বর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনসহ উপজেলার অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেওয়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো বানোয়াট, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমার বাবা শামসুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার আমলে আততায়ীর হামলায় নির্মমভাবে খুন হন। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছি। জনগণের সেবা করতে, তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে নির্বাচন করে বিজয়ী হই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’
উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিযোগ সম্পর্কে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, ‘আমরা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার রাতে যে অভিযোগ করেছি, তার পাল্টা হিসেবে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও অসত্য অভিযোগ এনে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের আনা অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়টি লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক তদন্ত করে দেখবেন।’ জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
আমরা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার রাতে যে অভিযোগ করেছি, তার পাল্টা হিসেবে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও অসত্য অভিযোগ এনে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে (১২ নভেম্বর) ইউএনও মনসুর উদ্দিনসহ উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে আসছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মসূচি—ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সুবিধাভোগীর জন্য বরাদ্দ আসা অর্থ থেকে নিজের অংশ দাবি করেন। প্রতিবাদ করলে সেই দপ্তরের কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং মারধরের হুমকি দেন। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন ফারুক ইমরুল। বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও তা নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান তিনি। এরপর ফারুক ইমরুল উপস্থিত থেকে তাঁর লোকজনকে ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা খোলার নির্দেশ দেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’
ওই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাংসদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে।