এবার ঈদেও বিক্রি হয়নি ৪২ মণের ‘সুলতান’, দুশ্চিন্তায় মালিক

অসুস্থ ‘সুলতানকে’ জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন গরুর মালিক রহুল আমিন। আজ সোমবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর রানীগাঁও গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

‘অনেক আশা করে গরুটাকে লালন-পালন করেছি। চলাফেরায় নবাবি ভাব থাকায় ভালোবেসে গরুটার নাম দিয়েছিলাম সুলতান। গত ঈদে কম দাম হওয়ায় বিক্রি করি নাই। এবার ঈদে এলাকায় দাম কম হওয়ায় অনেক কষ্টে ঢাকায় পশুর হাটে নিয়েছিলাম। পাঁচ দিন অপেক্ষায় থেকেও গরুটি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।’

আজ সোমবার দুপুরে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রানীগাঁও গ্রামের রহুল আমিন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছর আগে নিজের গোয়ালের একটি গাভিকে কানাডা থেকে আমদানি করা উন্নত মানের সিমেনের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে প্রজননের মাধ্যমে সুলতানের জন্ম হয়। প্রতিদিন খড়, ভুসি ও উন্নত মানের খাদ্য খাওয়ানোর ফলে আস্তে আস্তে বাছুরটি বড়সড় হয়ে ওঠে। সাড়ে তিন বছরে সুলতানের খাবার বাবদ খরচ হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি। সুলতানের ওজন ৪২ মণ, লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি।

স্থানীয় বাজারে ক্রেতা না থাকায় এই গরুর মালিক রহুল আমিন ১৫ জুলাই রাতে গরুটিকে বিক্রি করতে ঢাকার আফতাবনগর পশুর হাটে নিয়ে যান। সেখানেও সুলতানের কদর হয়নি। ক্রেতার সঙ্গে দরদাম না মেলায় আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন সুলতানকে। পাঁচ দিনের ধকল ও টানাহেঁচড়ায় বিশাল দেহের ‘সুলতান’ ও তাঁর মালিক রহুল আমিন দুজনই এখন অসুস্থ।

আজ সোমবার রহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সুলতান খুরারোগে অসুস্থ হয়ে মেঝেতে বসে আছে। এ সময় রহুল জোর করে সুলতানকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। ট্রাকে করে সুলতানকে আনা–নেওয়ায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। গরুর খুরারোগের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় বিক্রির জন্য নেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রহুল আমিন বলেন, পাঁচ দিন তিনিসহ আটজন মিলে গরুটিকে বিক্রি করতে চেষ্টা করেছেন। প্রথম একজন ক্রেতা ১১ লাখ টাকা দাম করেছিলেন। বেশি টাকার আশায় দেননি। পরে ক্রেতারা ছয় লাখ টাকা সুলতানের দাম করেছে। এত কম দাম করায় সুলতানকে নিয়ে ঈদের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি এসেছেন। এতে ট্রাকের ভাড়াসহ থাকা-খাওয়া বাবদ আরও ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন গরুটিকে নিয়ে কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সবুর প্রথম আলোকে বলেন, গরুটিকে ঢাকায় বিক্রি করতে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকাতেও গরুটি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। গত দুটি ঈদে গরুটি বিক্রি করতে না পেরে গরুর মালিক রহুল আমিন বিপাকেই পড়েছেন।

আরও পড়ুন