এবার গ্রামকে শহরে রূপ দেওয়া আমার লক্ষ্য

মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৭ সালে নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান হাওলাদার। চলতি বছর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা সপ্তমবারের মতো তিনি চেয়ারম্যান হন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া নানা বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

টানা সপ্তমবার চেয়ারম্যান হয়েছেন...

মজিবুর রহমান হাওলাদার: আমি জনগণকে ভালোবাসি, জনগণও আমাকে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসা থেকেই আমি টানা সাতবার চেয়ারম্যান হলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি জনগণের প্রিয়। ছাত্রজীবনে আমি ফুটবল, হাডুডু খুবই ভালো খেলতাম। যে মাঠে খেলতে যেতাম, সে মাঠে আগে থেকে ঘোষণা হতো অমুকে খেলতে আসবে। আমার খেলা দেখার জন্য গ্রামের সেই মাঠ দর্শকে ভরে যেত।

প্রশ্ন :

চাকরি–বাকরি না করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা হলো কেন?

মজিবুর রহমান হাওলাদার: রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কাছ থেকে সরাসরি তিনবার দেখেছি। তাঁর আদর্শ আর মানসিকতা দেখে তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করেছি। ন্যায্য দাবি আদায়ে আমি আমার পরিবার বা স্বজনদের বিপক্ষেও অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি।

প্রশ্ন :

গতবারের ইউপি নির্বাচনের হলফনামায় আপনার সম্পদের পরিমাণ কেমন ছিল? এবার কী পরিবর্তন এসেছে?

মজিবুর রহমান হাওলাদার: বাংলাদেশে আমার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। যতটুকু সম্পদ আছে, তা পৈতৃক। ইতালিতে আমার দুটি দোকান আছে। সেখানে যে ব্যবসা হয়, তাতে আমার চলে যায়। তাই সম্পদের পরিমাণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

প্রশ্ন :

আপনার ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশে একসময় সর্বহারাদের দাপট ছিল। কীভাবে তাদের হটালেন?

মজিবুর রহমান হাওলাদার: দুই দশক আগে এই এলাকা থেকে সর্বহারাদের সরাতে গিয়ে আমি জাসদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি। চার বছর আমাকে দেশের বাইরে থাকতে হয়। আশ্রয় নিই ইতালিতে। এই ইউনিয়নে আমি চতুর্থবার যখন চেয়ারম্যান, তখন ক্ষমতায় বিএনপি সরকার। তখন সন্ত্রাসী ও সর্বহারাদের আনাগোনা আরও বেড়ে যায় শিরখাড়ায়। সর্বহারারা আমার বড় ভাই আবদুল রাজ্জাক হাওলাদারকে দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করে। সর্বহারাদের রোধে আমি ঢাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চরমপন্থী ও সর্বহারাদের কার্যকলাপ তুলে ধরি। এলাকায় প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলি। এরপর ধীরে ধীরে সর্বহারাদের দাপট কমে যায়।

প্রশ্ন :

আগামী পাঁচ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার লক্ষ্য কী?

মজিবুর রহমান হাওলাদার: জাতীয় নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন। তাঁর চিন্তাভাবনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করাই আমার লক্ষ্য। তাই গ্রামকে শহরে রূপ দেওয়া আমার লক্ষ্য। জনগণ তাঁদের প্রত্যাশা আমাকে জানিয়েছেন। আমি ইউনিয়নের প্রতিটি হাট-বাজার, স্কুল-কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসাব। ইতিমধ্যে সে কাজও শুরু হয়েছে। শিক্ষা খাত আধুনিকায়নসহ পুরো ইউনিয়ন ডিজিটাল ইউনিয়নে পরিণত করা হবে। কৃষকেরা যেন সহজ শর্তে ঋণ পান এবং তাঁদের কৃষি উপকরণ পান, সেই বিষয়ে আমার সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

প্রশ্ন :

শিরখাড়া ইউনিয়নে ইতালিপ্রবাসীর সংখ্যা বেশি। অনেকেই অবৈধভাবে ইতালি যাচ্ছেন। এগুলো বন্ধে আপনার পক্ষ থেকে কী ভূমিকা থাকবে?

মজিবুর রহমান হাওলাদার: আমাদের দেশে সুন্দর সুন্দর আইন আছে। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। সবকিছুই কি আর প্রশাসন করে দেবে? মানুষকে সচেতন করতে হবে। পরিবারগুলোর কোনো নজর নেই। অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া বন্ধে দালালদের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থান নিয়ে তাদের শাস্তির দাবি জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে থাকি।