এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ২ নিরাপত্তাকর্মী বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস। ২৬ সেপ্টেম্বরপ্রথম আলো

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুই নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার আসামি ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের সিট বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভা শেষে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া দুজন হলেন রাসেল মিয়া ও সবুজ আহমদ। তাঁরা দুজনই চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।

আরও পড়ুন

যোগাযোগ করলে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত দুজন নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য দুজনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার আসামি ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হলে কলেজ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অন্য দুজন হলেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক (হোস্টেল সুপার) মো. জামাল উদ্দিন এবং কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক জীবন কৃষ্ণ ভট্টাচার্য। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন অধ্যক্ষ।

আরও পড়ুন
এমসি কলেজের ছাত্রাবাস
প্রথম আলো

গতকাল শুক্রবার রাতে নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রাবাসের ওই কক্ষ ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, ওই কক্ষে থাকা ছাত্রলীগের একটি পক্ষের ছয়–সাতজন কর্মী এ ঘটনায় জড়িত। এ ঘটনায় শাহপরান থানায় ওই তরুণীর স্বামী মামলা করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

ওই তরুণী বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান ওসিসিতে ওই তরুণীকে দেখতে যান। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীটির শারীরিক কোনো ঝুঁকি নেই। তবে মানসিকভাবে তিনি কিছুটা আতঙ্কিত। ওসিসির মাধ্যমে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা ঢাকায় করানো হতে পারে। সে জন্য নমুনা পাঠানো হবে।

ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের ভাষ্য, ওই তরুণীর (২০) বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। স্বামীর সঙ্গে নিজেদের গাড়িতে করে গতকাল বিকেলে এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে যান। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গাড়িটি রেখে একটি দোকান থেকে তাঁরা কেনাকাটা করেন। পরে ফিরে গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন তাঁরা। রাত আটটার দিকে পাঁচজন যুবক তাঁদের গাড়িটি ঘিরে ধরে স্বামী ও স্ত্রীকে জোর করে গাড়ি থেকে নামান। তিনজন যুবক তরুণীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে যান। স্বামীকে তখন গাড়িতে আটকে রেখেছিলেন দুজন যুবক। ঘণ্টাখানেক পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে গিয়ে স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান।