এমসি কলেজে ধর্ষণকাণ্ড: আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করতে পুনঃতদন্ত দাবি

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস।
ফাইল ছবি

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের রাজনৈতিক আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুনরায় তদন্তের দাবি উঠেছে। সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নাগরিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মোর্চা ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র পক্ষ থেকে শুক্রবার পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণের মামলায় পুলিশ যে আটজনকে অভিযুক্ত করেছে, তা প্রযুক্তিগত সহায়তায়। পুলিশের নিজস্ব কোনো তদন্ত নেই, ধর্ষণের পর ধর্ষণকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারীরা সমান অপরাধী বলে বিবেচিত হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় মামলা হলে একে একে গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। প্রায় দুই মাস পর পুলিশের তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত সব আসামিই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র পক্ষ থেকে সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী, দেবাশীষ দেবু, মোহাম্মদ আশরাফুল কবির, দেবব্রত চৌধুরী ও রাজীব রাসেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে যাঁরা এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা এক দিনে এ রকম বেপোরোয়া হয়ে ওঠেননি। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা এ রকম অপকর্ম ঘটিয়ে আসছেন। এই একই গোষ্ঠী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসেও অগ্নিসংযোগ করে। মারামারি ও খুনোখুনি তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠে। টিলাগড়–বালুচর এলাকা হয়ে উঠেছে নগরবাসীর আতঙ্কের নাম। রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় আর আশকারা পেয়েই ছাত্রলীগ নামধারী দুর্বৃত্তরা একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে চলছেন, যা ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজসহ পুরো সিলেটকেই কলঙ্কিত করছে।

‘কেবল ধর্ষণে সরাসরি সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনলেই এই এলাকার অপরাধ ও অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা ও গডফাদারদের ছত্রচ্ছায়ায় নতুন নতুন অপরাধী তৈরি হবে। এ জন্য আমরা প্রথম থেকেই টিলাগড় এলাকার গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসছি।’ পুলিশের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মোর্চার সংগঠকেরা। তাঁরা বলেছেন, ‘ছাত্রাবাসে ধর্ষণের মামলায় অভিযোগপত্র প্রদান করেছে পুলিশ, এই অভিযোগপত্র আমাদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ডিএনএ প্রতিবেদননির্ভর একটি অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশের নিজস্ব তদন্তের কোনো ছাপ নেই। আসামিরা কাদের সহযোগিতায় পালাল, কারা তাদের আত্মগোপনে সহায়তা করেছে, কাদের সহযোগিতায় বন্ধ ছাত্রাবাসে তারা আস্তানা গড়ে তুলল—এসব ব্যাপারে অভিযোগপত্রে কিছু উল্লেখ নেই।’

‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠকেরা মনে করেন, এটি একটি অসম্পূর্ণ অভিযোগপত্র। পুলিশ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নেপথ্যে থাকা গডফাদারদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে ধর্ষণকাণ্ডের আশ্রয়দাতা চিহ্নিত করতে হবে। নতুবা এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না।

ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত আটজনই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী। এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি জঘন্য ঘটনা। আমরা শুরু থেকেই অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখছি। ব্যক্তিবিশেষের অপরাধ দলের ওপর চাপানো ঠিক নয়। অপরাধীদের কোনো দল নেই।’