এলাকায় ফেরা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় র‌্যাবের দুই মামলা

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর রায়পুরার চাঁনপুরে র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে র‌্যাব-১১ নরসিংদীর পক্ষ থেকে দায়ের করা দুটি মামলাতেই পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। হামলায় র‌্যাবের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বাচ্চু মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র বর্শা নিক্ষেপের সময় আটকের বিষয়ে অপর মামলাটি করা হয়। একই ঘটনায় বিদেশি অস্ত্রসহ সোহাগ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা অস্ত্রসহ সোহাগকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন। তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁনপুর ইউনিয়নের কুড়েরপাড় গ্রামের মেঘনা নদীর তীরে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতিতে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন গুলিবিদ্ধ ও অন্তত ১০ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ওই ঘটনায় জানমাল ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে ২১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে করপোরাল হেলাল উদ্দিন মাথার সামনের অংশে বল্লমের আঘাত পেয়েছেন, এলএমই আসাদুজ্জামান মাথার মধ্যভাগে ও হাতের কবজিতে টেঁটার আঘাত পেয়েছেন এবং এএসআই আবদুর রাজ্জাক কোমরের পেছনের নরম অংশে বল্লমের আঘাত পেয়েছেন।

মামলার তথ্য নিশ্চিত করে রায়পুরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে পাওয়া লিখিত অভিযোগটি রোববার বিকেলে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি টিম কুড়েরপাড় গ্রামে অভিযান চালাতে গেলে কয়েকজন সদস্য টেঁটাবিদ্ধ হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা করেছেন র‌্যাব-১১ নরসিংদীর উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) রেজাউল করিম।

মামলায় নাম উল্লেখ করা পাঁচ আসামি হলেন কুড়েরপাড়ের সাদির মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪০), মৃত স্বাধীন মিয়ার ছেলে এরশাদ মিয়া (৩৫), মৃত তোতা মিয়ার ছেলে মফিজ উদ্দিন (৪৫), মনতাজ মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া (৪৫) ও ছাহেদ মিয়ার ছেলে তাহের মিয়া (৪৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, কুড়েরপাড় গ্রামে এরশাদ গ্রুপ ও শহীদ গ্রুপ নামের দুটি পক্ষ আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে কুড়েরপাড় গ্রামে এরশাদ গ্রুপের আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত ব্যক্তির ভাই জুলহাস মিয়া বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় আসামিপক্ষের লোকজন এলাকাছাড়া হয়ে যান। সম্প্রতি মামলার পলাতক আসামিরা আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করছিলেন। নিহত আলমগীর হোসেন ছিলেন এরশাদ গ্রুপের সদস্য।

এলাকাছাড়া ব্যক্তিদের কয়েকজন র‌্যাব-১১ নরসিংদীর একটি দলের সহায়তায় শনিবার সকালে একটি স্পিডবোটে করে কুড়েরপাড় যান। স্পিডবোট থেকে নামার পর এরশাদ গ্রুপের লোকজন তাঁদের গ্রামে প্রবেশে বাধা দেন। ওই সময় র‌্যাব সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু অনুরোধ উপেক্ষা করে র‌্যাব ও সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করে বসেন তাঁরা। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

র‌্যাব-১১ নরসিংদীর অধিনায়ক ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তৌহিদুল মবিন খান বলেন, কুড়েরপাড়ের এলাকাছাড়া কিছু লোক এলাকায় প্রবেশের জন্য র‌্যাবের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওই সময় র‌্যাবের টহল চলছিল সংলগ্ন মেঘনা নদীতে। পরে তাঁদের সহযোগিতার জন্য কুড়েরপাড় গ্রামের মেঘনা নদীর তীরে যায় দলটি। তারা স্পিডবোট থেকে নামার পরই অন্য গ্রুপের লোকজন টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় র‌্যাব সদস্যরাও ফাঁকা গুলি চালান। পরে উত্তেজিত লোকজন র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা চালালে কয়েকজন আহত হন। আইনগত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মামলা করা হয়েছে।