এসআই আকবরসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রায়হানের মায়ের অনশন

পুলিশের নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের মা ছালমা বেগম বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে রোববার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন।প্রথম আলো

সিলেটে যে পুলিশ ফাঁড়িতে মো. রায়হান আহমদ (৩৪) নির্যাতনে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই ফাঁড়ির সামনে স্বজনদের নিয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন তাঁর মা ছালমা বেগম। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে এই ঘটনার মূল হোতাসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ছালমা বেগম কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় ‘রায়হানের মায়ের অনশন’ শীর্ষক ব্যানারও প্রদর্শন করা হয়।

রায়হানের মায়ের এই অনশন কর্মসূচির সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছাড়াও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা একাত্ম হয়েছেন। রায়হানের মা জানিয়েছেন, নির্যাতনের মূল হোতা বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঞাসহ সব হত্যাকারী গ্রেপ্তার না হলে তিনি অনশন অব্যাহত রাখবেন। অনশনে অংশ নেওয়া সবার মাথায় কাফনের কাপড়সাদৃশ্য সাদা কাপড় ছিল।

১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করার পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন পলাতক।

অনশনকালে রায়হানের মা ছালমা বেগম অভিযোগ করেন, ১০ অক্টোবর রায়হানকে এই ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা করার পর অভিযুক্ত ফাঁড়ির পুলিশদের বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান মূল হোতা এসআই আকবর হোসেন। দুই সপ্তাহ পরও তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীসহ দেশে ও বিদেশে নানা কর্মসূচি পালনের পরও আকবর ধরা না পড়ায় তিনি এই অনশন করছেন। রায়হানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশনে থাকবেন।

১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করার পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন পলাতক। তবে এ ঘটনায় টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদ নামের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সিলেট নগরীর একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন রায়হান। স্ত্রী, আড়াই মাস বয়সী এক মেয়ে, মা-সহ যৌথ পরিবার নিয়ে তিনি আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বসবাস করতেন। ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত তিনটার দিকে রায়হানকে সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে রায়হান মারা যান।

এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার পরদিন ১১ অক্টোবর হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় পরদিন ওই পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যতে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ। আকবর ১৩ অক্টোবর থেকে পলাতক। পুলিশ থেকে মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইয়ে হস্তান্তর হলে রায়হানের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত হয়। নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফাঁড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ক্লিপ গায়েব, তথ্য গোপন করাসহ বরখাস্ত এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তা করার দায়ে ২১ অক্টোবর ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সংগ্রাম পরিষদের নতুন কর্মসূচি ‘মানবপ্রাচীর’

গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের মদিনা মার্কেট পয়েন্টে বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের মানববন্ধন হয়। এর আগে ওই এলাকাসহ সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড এলাকায় খণ্ড খণ্ড ১৫টি মিছিল মানববন্ধনে যোগ দেয়। বিকেল চারটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলা মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমির হোসেন ও রায়হানের মামাতো ভাই শওকত আলী। একই সময় চৌকিদখি-খাসদবির এলাকাবাসীর মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন রায়হানের মা ছালমা বেগম।

বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যার মূল হোতা এসআই আকবর ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক। ১২ দিনেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যর্থতায় সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারকে সরানো হয়েছে। আকবরসহ সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে সংগ্রাম পরিষদ মানবপ্রাচীর কর্মসূচির ডাক দেবে।

রাতে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ সংগ্রাম পরিষদের নতুন কর্মসূচি মানবপ্রাচীর করার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ‘মানবপ্রাচীর’ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার সিলেটে নতুন কমিশনার যোগ দেওয়ার কথা। সার্বিক বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করে এবং পিবিআইয়ের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে সিলেটজুড়ে মানবপ্রাচীর করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।