এসআই আকবরসহ জড়িতদের ৭২ ঘণ্টায় গ্রেপ্তারের দাবি

‌সিলেটে পু‌লিশ ফাঁ‌ড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের প‌রিবার ও বৃহত্তর আখা‌লিয়া এলাকাবাসীর আয়োজনে রোববার রায়হানের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় ছেলে হত‌্যায় জ‌ড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দা‌বিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সালমা বেগম।
প্রথম আলো

সিলেটে পুলিশ হেফাজতে মো. রায়হান আহমদের (৩৪) মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ জড়িত ব্যক্তিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছে পরিবার। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ায় নিহত রায়হান আহমদের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তাঁর মা সালমা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রায়হানের মামাতো ভাই শওকত আলী।

উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে রায়হান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত, পলাতক এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইজিপির নির্দেশনা, পুরো ঘটনার সম্পর্কে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য ও নিহত ব্যক্তির পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

লিখিত বক্তব্যে রায়হানের পরিবার ও বৃহত্তর আখালিয়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। তাঁদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে রায়হান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত, পলাতক এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইজিপির নির্দেশনা, পুরো ঘটনার সম্পর্কে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য ও নিহত ব্যক্তির পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রায়হান হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে হরতাল-সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশের নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনার সাত দিন পার হয়ে গেলেও কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাঁর নাম এসেছে, সেই বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন পালিয়ে গেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সময়ক্ষেপণের কারণে হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইলিয়াছুর রহমান, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ।

১০ অক্টোবর রাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে কল করে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার চালান। কিন্তু গণপিটুনির স্থান হিসেবে যেখানকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থাপন করা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় এমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় গত রোববার রাতে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখের তত্ত্বাবধানে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় গত সোমবার এসআই আকবরসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আকবর হোসেনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন রায়হান। সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আখালিয়ার নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, আড়াই মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বাস করতেন তিনি।