এসপির নামে অর্থ আদায় করতে গিয়ে ধরা

মোস্তাফিজুর রহমান (মাঝে)প্রথম আলো

পুলিশের ডিআইজি, এসপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ম্যাসেঞ্জারে ভুয়া আইডি খুলতেন মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে নীরব। এরপর ফেসবুকে যারা সরকারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, লাইক বা শেয়ার করত, তাদের খুঁজে খুঁজে ফোন করে মামলা দেওয়ার ভয় দেখাতেন তিনি। পাশাপাশি তিনি মামলার হাত থেকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করত তাঁর চাচাতো বোন সুফিয়া বেগম। এভাবে ৬৮ জনের কাছ থেকে তাঁরা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করেছেন।

অবশেষে নীলফামারীর এসপি মোখলেছুর রহমানের নাম ব্যবহার করে বিকাশে টাকা আদায় করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সৈয়দপুর শহরের শুঁটকির মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী চাচাতো বোন সুফিয়া বেগমকে দিনাজপুর জেলার কাহারোল এলাকার রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চৌরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সর্বশেষ তিনি চট্টগ্রামের মধ্যম হালিশহর মাইজপাড়া এলাকায় বসবাস করছিলেন।

আজ বিকেলে নীলফামারী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক মোস্তাফিজুর রহমানের নানা কুকীর্তি তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান।

মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার নিজস্ব ফেসবুক থেকে ছবি সংগ্রহ করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। বিষয়টি জানার পর তদন্ত শুরু করা হয়। একপর্যায়ে আমার নাম ব্যবহার করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে বিষয়টি নজরে আসে এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।’

মোস্তাফিজুরকে এ কাজে সহায়তা করত তাঁর চাচাতো বোন রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সুফিয়া বেগম। বিকাশে টাকা আদায় করতে সুফিয়ার ০১৩০১১৭৭৯৩০ নম্বরটি ব্যবহার করা হতো। ওই টাকা তাঁরা দুজনে ভাগ করে নিত।

মোস্তাফিজুর একজন এসআইয়ের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলে এই প্রতারণা শুরু করে। এ নিয়ে মামলা হলে ২৩ মাস কারা ভোগ করে বেরিয়ে এলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।

এসপি বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর আবারও নতুন করে ভুয়া আইডি খুলে প্রতারণা শুরু করেন মোস্তাফিজুর। বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ৬৮ জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন তাঁরা। বিকাশের স্টেটমেন্টে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।