ওসমানীনগরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন জায়গা অধিগ্রহণের দাবি

সিলেটের ওসমানীনগরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন স্থান অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান। মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে।
ছবি : প্রথম আলো

সিলেটের ওসমানীনগরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণ ও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের পাল্টাপাল্টি তৎপরতার মধ্যে নতুন স্থান নির্ধারণ করার দাবিতে সক্রিয় হয়েছে আরও একটি পক্ষ। ওসমানীনগর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে ওই পক্ষ ৯টি নতুন স্থান প্রস্তাব করে এর মধ্যে যেকোনো একটি স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য জমি অধিগ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমানসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা ওসমানীনগর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা পরিষদ গঠন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গ্রামতলা মৌজার একটি আবাসন প্রকল্প এলাকার ৩০০ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থানীয় সাংসদ গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান বিনা মূল্যে জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি করতে চেয়েছিলেন। সাংসদের এই প্রস্তাব গ্রহণ না হওয়ায় তিনি ২৯ মে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় একটি ভূমি সিন্ডিকেট সরকারের ১০ কোটি টাকা লুটপাট করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের একটি অংশ ১ জুন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে সাংসদ মোকাব্বির খানের এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছিলেন।

এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি তৎপরতার মধ্যে ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘বিনা মূল্যেও জমি না নিয়ে কয়েক কোটি টাকায় জমি কেনার চিন্তা’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন জায়গা অধিগ্রহণের দাবিতে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতাউর রহমান। তিনি  সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ওসমানীনগর উপজেলার ৫টি মৌজার ৯টি স্থানে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, প্রস্তাবিত মৌজাগুলোর মধ্যে পূর্ব মোল্লাপাড়া ও দশহাল এলাকার চারটি স্থান এই শিক্ষাতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য উপযুক্ত।

বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে দেশের সব উপজেলায় একটি করে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম ধাপে ১০০টি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১০০টি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ বিভিন্ন ধাপে চলমান। এরই ধারাবাহিকতায় ওসমানীনগরে একটি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের জন্য ৩০০ শতক ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ওসমানীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারকে নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইউএনও সরকারি নির্দেশনা না মেনে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের ৩০০ শতক জমি নির্বাচন করে তা অধিগ্রহণের জন্য একটি প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয় সাংসদের ডিও লেটার চাইলে সাংসদ মোকাব্বির খান ডিও লেটার দিতে অসম্মতি জানান। সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ইউএনওর দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সাংসদ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উপজেলার শংকর পাশা মৌজার স্থান উল্লেখ করে ডিও লেটার দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থানীয় সাংসদ একজন সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনিও যে জায়গা নির্ধারণের কথা বলেছেন, তা জনমানবশূন্য ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের সঙ্গে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় সাংসদ মোকাব্বিরের এই সিদ্ধান্ত জনবান্ধব ও সূদুঢ় প্রসারী নয়।

এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন ও সাংসদের নির্ধারণ করা দুটি স্থান বাদ দিয়ে নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদনে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনে উপজেলার ৫টি মৌজার ৯টি স্থানের প্রস্তাব করেছি। এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা বেশ ভালো। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

ওসমানীনগরের ইউএনও যে জায়গা নির্ধারণ করেছেন, সেই জায়গার সরকারি মূল্য শতকপ্রতি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গা প্রস্তাব করেছি, তাদের মধ্যে দশহাল মৌজায় ভূমির সরকারি শতক মূল্য ২৮ হাজার টাকা রয়েছে। বাকি মৌজাতেও ভূমির দাম তুলনামূলক কম। এ ছাড়া এসব এলাকায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলে দুজন ব্যক্তি দুই মৌজায় ২৭০ শতক ভূমি বিনা মূল্যে দান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও কেন মূল্য দিয়ে ভূমি ক্রয় করার প্রস্তুতি চলছে, তা আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত।’

সংবাদ সম্মলনে উপস্থাপন করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও তাহমিনা আক্তার এ ব‍্যাপারে কোনো মন্তব‍্য করতে রাজি হননি। তবে এর আগে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, নীতিমালা মেনেই তিনি জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওসমানীনগর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা পরিষদের জ্যেষ্ঠ আহ্বায়ক জহুর আহমদ, আফরোজ আলী, তাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান এম ইমরান রব্বানী, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবদাল মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আনা মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি চঞ্চল পাল, তাজপুর কলেজছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ফয়ছল হোসেন, প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, দয়ামীর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।