ওয়াসার প্রকল্পে অনিয়ম,পানির কষ্টে খুলনাবাসী

ওয়াসার এ ধরনের ‘অদূরদর্শী’ প্রকল্পগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের কারণে নগরের বাসিন্দারা পানির কষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটি। গতকাল শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি বলেছে, প্রকল্পে অনিয়মের কারণে ওয়াসার পানি আজ লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেখান থেকে পানি নিয়ে শোধন করে নগরে সরবরাহ করা হয়, সেখানে লবণাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পে লবণাক্ত শোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

খুলনায় পানি নিয়ে কাজ করে, এমন বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতাদের নিয়ে ওই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার এ ধরনের ‘অদূরদর্শী’ প্রকল্পগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক নাজমুল আযম। এতে বলা হয়, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ওয়াসা নগরবাসীকে মানসম্মত পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১১ সালের মার্চে জাইকার ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়, যে এলাকায় ওই স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে, সেখানের পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। প্রথাগত শোধনের মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান ভারী ধাতু অপসারণ করা যাবে না। তারপরও প্রকল্পে পরিশোধন কেন্দ্রে নদীর পানির ময়লা-দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হয়নি লবণাক্ততা শোধনের কোনো ব্যবস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে ভৈরব-মধুমতীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ে, দিন দিন আরও বাড়বে, সেটা অনুমিত। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি।

৪৬ বর্গকিলোমিটারের খুলনা মহানগরে ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। খুলনাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে ওয়াসা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতী নদীর পানি সংগ্রহের পর পরিশোধনের মাধ্যমে নগরে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে মহানগরের ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এই পানি নোনা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। নগরের মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা সম্ভব। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৩ কোটি ৪৯ লাখ লিটার।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা। সার্বিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের অন্যতম সদস্য গৌরাঙ্গ নন্দী। অতিথি ছিলেন প্রবীণ নাগরিক নেতা এনায়েত আলী, খুলনা প্রেসক্লাবে সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন, নারীনেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।

এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। ফিজিবিলিটি স্টাডির পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে, সেভাবেই করা হয়েছে। লবণাক্ততা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় আকারের একটি রিজার্ভার করা হয়। এ বছর কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে রিজার্ভের পানীয় গেছে ফুরিয়ে। এসব কারণে বেশি লবণাক্ত পানি যাচ্ছে। তবে একটু বৃষ্টি হলে ওই সমস্যা আর থাকবে না।