কক্সবাজারে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৩

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারে তরুণীকে আদালত এলাকা থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ ১০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে জেলার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়েছেন র‍্যাব-১৫–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম সরকার।

গ্রেপ্তার তিন আসামি হলেন ঈদগাঁও ইউনিয়নের ফকিরাবাজার এলাকার ফিরোজ আহমদ, নুরুল ইসলাম ও ইসলামপুরের মো. শরীফ। তবে মামলার ২ নম্বর আসামি রাসেল উদ্দিনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

র‍্যাবের দাবি, ফিরোজ ও শরীফ উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ১০টির বেশি মামলার পালাতক আসামি। আসামিদের ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ জানায়, ১৫ মার্চ এক তরুণী বাদী হয়ে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ফিরোজ আহমদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফিরোজ ও শরীফের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ১৪ মার্চ দুপুরে তিনি (তরুণী) কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কার্যালয় থেকে বের হলে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় ফিরোজ, শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন এসে তাঁর হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। এরপর কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় আটকে রেখে প্রথমে ফিরোজ ও শরীফ তাঁকে ধর্ষণ করেন।

পরে নুরুল ইসলাম ধর্ষণ করে তাঁর মুঠোফোন ও ব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর রাসেল উদ্দিন ওই কক্ষে এসে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে জানালে বা বাড়াবাড়ি করলে মানব পাচার মামলায় চালান করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। একপর্যায়ে রাসেলও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এরপর ওই তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাসেল ও শরীফ তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসেন। এ দৃশ্য দেখে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দিলে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার তিন আসামির নানা অপরাধকর্মের তথ্য তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম সরকার বলেন, ১৪ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে ওই তরুণীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন ফিরোজ। এ ছাড়া ধর্ষণের পর তরুণীকে ফিরোজ মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। এর আগে তাঁর নির্দেশনায় ওই তরুণীর মুখমণ্ডল ধারালো ছুরির আঘাতে বিকৃত করে দেন তাঁর সহযোগী সন্ত্রাসীরা।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিরা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, পাহাড় কাটা, সরকারি পাহাড় দখল, বনের গাছ কেটে বিক্রি, হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। সম্প্রতি আসামি শরীফ ও তাঁর গ্যাং কক্সবাজারে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন—যার তথ্যপ্রমাণ র‍্যাবের কাছে রয়েছে। এলাকায় তাঁর একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে বলে শরীফ নিজেও স্বীকার করেছেন।