কক্সবাজারে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে আদালত এলাকার মসজিদ মার্কেটে এক আইনজীবীর কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই তরুণীর।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে ওই তরুণী চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দিয়েছেন বলে দাবি করছেন। থানায় জমা দেওয়া একটি লিখিত এজাহারও ওই তরুণীর হাতে দেখা গেছে, যেটা গতকাল কক্সবাজার সদর মডেল থানার ডিউটি অফিসার গ্রহণ করেছেন। তবে পুলিশের দাবি, ওই ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ওই তরুণীর কোনো এজাহার পায়নি।

ওই তরুণীর অভিযোগ, গতকাল দুপুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মোরশেদসহ অন্য অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনায় থানা–পুলিশের ভূমিকা ‘রহস্যময়’।

ওই তরুণী বলেন, তিনি এজাহারে চার আসামির নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁরা হলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফিরোজ আহমদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ফিরোজ ও শরীফ বিভিন্ন সময় তাঁকে উত্ত্যক্ত করে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিতেন। তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে তিনি কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কার্যালয় থেকে বের হলে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে ফিরোজ ও শরীফ তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাধা দিলে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন এসে তাঁর হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। এরপর ফিরোজ ওই তরুণীর স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নেন।

এরপর মাইক্রোবাসটি কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় যায়। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে ওই বাড়ির একটি কক্ষে ওই তরুণীকে আটকে রেখে ফিরোজ ও শরীফ তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে একইভাবে নুরুল ইসলামও তাঁকে ধর্ষণ করে তাঁর মুঠোফোন ও টাকা নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর রাসেল উদ্দিন ওই কক্ষে এসে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে জানালে অথবা বাড়াবাড়ি করলে মানব পাচার মামলায় চালান করে দেওয়ার হুমকি দেন রাসেল। একপর্যায়ে রাসেলও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন

দলবদ্ধ ধর্ষণের কারণে একপর্যায়ে ওই তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর রাসেল ও শরীফ ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসেন। এ দৃশ্য দেখে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দিলে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।

ওই তরুণী বলেন, গত বছর বর্ষাকালে রাতে তাঁর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম করেন। এ ঘটনায় তিনি মামলা করলে ডাকাত মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেন। কাল ১৫ মার্চ ওই মামলার ধার্য তারিখ। ওই মামলায় ন্যায়বিচার পেতে করণীয় নির্ধারণে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে গতকাল দুপুরে তিনি আদালত এলাকায় গিয়েছিলেন। গতকাল দুপুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মোরশেদসহ অন্য অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করেন বলে তিনি দাবি করেন। এ ঘটনায় থানা–পুলিশের ভূমিকা রহস্যময় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস প্রথম আলোকে বলেন, আদালত এলাকা থেকে তরুণীকে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে শহরের বিএনপি অফিসের পেছনের গলিতে ওই তরুণীর সঙ্গে রাসেলের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি জানান।

মামলার এজাহার প্রসঙ্গে ওসি শেখ মুনীর বলেন, ওই তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পর ওই তরুণী এজাহার লেখার কথা বলে বেরিয়ে গেছেন। এরপর আর তিনি থানায় ফিরে আসেননি। আজ দুপুর পর্যন্ত ওই তরুণীর লিখিত কোনো এজাহার তাঁরা পাননি।