কটিয়াদীতে মেলায় র্যাফল ড্রর নামে লাখ টাকার জুয়া
বেলা ৩টা ২০ মিনিট। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরের চালমহল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মাইকিং করে র্যাফল ড্রর টিকিট বিক্রি চলছে। মাইকের উচ্চ শব্দে আকর্ষণীয় সব পুরস্কারের প্রচারণা চলছে। ২০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে পুরস্কার হিসেবে ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল কিংবা স্বর্ণের মালা জেতার সুযোগ। লোভনীয় এসব পণ্য ছাড়াও ৩৬টি পুরস্কারের তালিকায় আছে সময়ের আলোচিত সয়াবিন তেল। আকর্ষণীয় পুরস্কারের আশায় ওই অটোরিকশা ঘিরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়।
৫ মে থেকে কটিয়াদী পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় কটিয়াদী সরকারি কলেজসংলগ্ন একটি মাঠে তাঁত, শিল্প ও বস্ত্র মেলা শুরু হয়েছে। এ মেলায় প্রতি রাতেই র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, র্যাফল ড্রর নামে লাখ লাখ টাকার জুয়ার আয়োজন চলছে। এতে ছোট একটি মহল লাভবান হলেও সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটিয়াদী পৌরসভার মেয়র শওকত উসমান মেলা ও র্যাফল ড্র পরিচালনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি টানা দুবারের মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর নির্বাহী সদস্য।
চালমহল সড়কে প্রচার গাড়ি থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী কানু সাহা। টিকিট কেনার আগ্রহের কারণ চাইলে কানু সাহা বলেন, ‘আমার আগ্রহ মোটরসাইকেল। এই আশাতেই প্রতিদিন ১০টি করে টিকিট কিনে যাচ্ছি।’ তবে হতাশ হয়ে জানালেন মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত ৩৬ পুরস্কারের কোনোটিই পাননি তিনি। তবে মোটরসাইকেলের আশায় মেলার শেষ দিন পর্যন্ত তিনি টিকিট কিনে যাবেন বলে জানালেন।
টিকিট বিক্রেতা ইউনুস মিয়ার বাড়ি বগুড়া সদরে। তিনি বলেন, র্যাফল ড্র পরিচালনার জন্য সিন্ডিকেটের প্রায় ১৫০ জন এখন বগুড়া থেকে কটিয়াদীতে অবস্থান করছেন। ইউনুস মিয়া বলেন, টিকিট বিক্রির জন্য প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তি অটোরিকশা নিয়ে বের হন। প্রতিজনের কাছে গড়ে এক হাজার টিকিট থাকে। কটিয়াদী ছাড়াও পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলায়ও মাইকযোগে টিকিট বিক্রি করা হয়। টিকিট বিক্রির জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি বুথ বসানো হয়েছে। মেলার প্রধান ফটকের সামনেও ড্র হওয়ার আগপর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটিয়াদী পৌরসভার মেয়র শওকত উসমান মেলা ও র্যাফল ড্র পরিচালনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি টানা দুবারের মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর নির্বাহী সদস্য।
অনেককে টাকা দিতে হয়। আবার অনেকে বেশি টাকা দাবি করেন। কম হলে উল্টাপাল্টা শুরু করেন। এত সব সমন্বয় করে লাভ থাকে না।
মাসব্যাপী এ মেলায় প্রতিদিন রাত ১০টায় র্যাফল ড্রর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলার র্যাফল ড্রর কারণে অনেক মানুষ টিকিট কিনে টাকা অপচয় করছেন। টিকিটের ক্রেতাদের তালিকায় নারীর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।
কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, র্যাফল ড্রর কারণে একটি ছোট জনপদ থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা একটি নির্দিষ্ট খাতে চলে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজি ও মাছ বাজারে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। চুরি-ছিনতাইও বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় গত মঙ্গলবার তিনি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিকার চেয়েছেন।
তবে র্যাফল ড্রর টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করার অভিযোগ অস্বীকার করেন মেয়র শওকত উসমান। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট খরচ অনেক। অনেককে টাকা দিতে হয়। আবার অনেকে বেশি টাকা দাবি করেন। কম হলে উল্টাপাল্টা শুরু করেন। এত সব সমন্বয় করে লাভ থাকে না।’
এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পারেননি বলে তিনি দাবি করেন। কারণ হিসেবে মেয়র বলেন, মেলা শুরুর পর থেকে সাত দিন বৃষ্টি ছিল। মাত্র দুই দিন রোদ উঠেছে। তাই মানুষের সমাগম কম।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, মেলা নিয়ে সমস্যার কথা তাঁর অজনা নয়। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসকের নজরে এনেছেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, মেলা পরিচালনায় অসংগতিগুলো সুনির্দিষ্ট করে জানাতে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে লিখিত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।