করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মানুষের পারাপার। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে ফেরিতে শুধু পণ্যবাহী পরিবহন ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহন ও যাত্রী পারাপার বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
গত ২৮ জুন থেকে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর তিন দিন পর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিতে অবাধে পারাপার হচ্ছে মানুষ এবং ব্যক্তিগত যানবাহন। গত কয়েক দিনের তুলনায় ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মানুষ বেশি পারাপার হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও টিকিট কাউন্টার এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, গরুবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী ট্রাকের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনের লম্বা লাইন। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে ফেরিঘাটে গিয়ে কোনো বাধা ছাড়াই সরাসরি উঠে যাচ্ছে ফেরিতে। তার সঙ্গে ঘরমুখী ও ঢাকামুখী মানুষকেও ফেরি পারাপার হতে দেখা যায়। বিশেষ করে পাটুরিয়া ঘাট ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীর চাপ রয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ইউটিলিটি ফেরিঘাটে একটি ছোট ফেরি ভিড়ে। এ সময় ফেরিতে আটটির মতো পণ্যবাহী গাড়ি, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি, কয়েকটি মোটরসাইকেল এবং কয়েক শ যাত্রী দেখা যায়। রাজধানী ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী এসব মানুষ বিভিন্ন উপায়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
দুপুর ১২টার দিকে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ইউটিলিটি ফেরিঘাটে কথা হয় কুষ্টিয়া থেকে আসা ঢাকাগামী একটি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ, মা–বাবা, ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। রাস্তায় অনেক ঝক্কি–ঝামেলা ম্যানেজ করেই চলাচল করছি।’
ঢাকা ছেড়ে ফরিদপুরের মধুখালী গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম। ফেরিঘাটে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কোনো কামকাজ নাই, থাইহা কী করব, এই জন্য চইলা আইছি। বউ পোলাপান নিয়া কষ্ট ওইবো, কিন্তু কী আর করমু উপায় নাই। তবু বাধ্য হয়েই গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সিহাব উদ্দিন বলেন, পণ্যবাহী ও পশুবাহী যানবাহন কম থাকায় বর্তমানে চারটি রো রো (বড়), তিনটি ইউটিলিটি (ছোট) এবং একটি কে টাইপ (মাঝারি) আকারের ফেরি পর্যায়ক্রমে চালানো হচ্ছে। সাধারণত সন্ধ্যার পর নিয়মিত গাড়ির সঙ্গে পণ্যবাহী, পশুবাহী ট্রাকের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি পাস নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে। সেই সঙ্গে পার হচ্ছে ঢাকামুখী ও ঘরমুখী জরুরি প্রয়োজনের কিছু মানুষ। তবে ঢাকামুখীর চেয়ে ঢাকা ছেড়ে আসছে বেশির ভাগ মানুষ।