কবজি হারানো মহরমীর চোখের আলোও নিভে গেল চিরতরে

বিস্ফোরণে কবজি হারানোর পর চিরতরে চোখের আলো হারিয়ে ফেলল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মহরমী খাতুন
প্রথম আলো

এলাকায় বিবদমান আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে কারও ফেলে রাখা ককটেল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়ার সময় বিস্ফোরণে কবজি হারায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মহরমী খাতুন। এবার চিরতরে চোখের দৃষ্টিও হারিয়ে গেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই শিশুর। চিকিৎসকেরা মহরমীর পরিবারকে এমনটাই জানিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার গণকা মহল্লার বাসিন্দা মহরমীর মা মাসকুরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ককটেল বিস্ফোরণে তাঁর মেয়ের ডান হাতের কবজি উড়ে যায়। মেয়ে দুই চোখে আঘাত পায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তাঁরা বলেন, মহরমীর এক চোখ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে এবং অন্য চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আশা ক্ষীণ। মহরমীকে প্রথমে ঢাকায় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং পরে বাংলাদেশ আই হসপিটাল লিমিটেডে চিকিৎসা করানো হয়। প্রথমে মেয়ের এক চোখে কিছুটা দেখতে পাওয়ার আশার কথা জানালেও আড়াই মাস পর জানানো হয়, আর কোনো আশা নেই।

মাসকুরা খাতুন বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে ভারতে নিয়ে যেতে পারলে মনে সান্ত্বনা পেতেন। তাঁরা চোখ প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেছেন, সেটা হবে না। মহরমী আর দেখতে পাবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে কি সরকার দাঁড়াবে না?যাদের কারণে মহরমীর এ অবস্থা তাঁদের কেউও আমাদের খোঁজ নিতে আসেননি। তবে পুলিশ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সাহায্যের আবেদন জানিয়েছি। এখনো সাড়া পাইনি।’

হঠাৎ চোখের আলো হারিয়ে দিশেহারা মহরমী। সে বলল, ‘আমি পড়তে চাই। শুনেছি অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা স্কুল আছে। আমি সেখানে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু কে আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে?’

ককটেল বিস্ফোরণে মহরমীর কবজি উড়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করে। মামলার এজাহারে আসামিদের দলীয় পরিচয় উল্লেখ নেই। কিন্তু আসামি তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাঁরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিবদমান দুই পক্ষের লোক। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গণকা, বিদিরপুর ও আলীনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়ামুল গ্রুপ ও তামিজ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এঁদেরই লুকিয়ে রাখা ককটেল কুড়িয়ে পেয়ে নাড়াচাড়া করার সময় মহরমীর কবজি উড়ে যায় ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে মহরমীর ছোট বোন (৩) আহত হয়।

তামিজ গ্রুপের তামিজ উদ্দীন হচ্ছেন পৌর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও নিয়ামুল গ্রুপের নিয়ামুল হক হচ্ছেন পৌর যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মিজানুর রহমান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ বাবু তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

মায়ের সঙ্গে মহরমী
প্রথম আলো

মিজানুর রহমান দুই পক্ষের বিবাদ ও মহরমীর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে আমানুল্লাহ বাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। দুই পক্ষের বিবাদ কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কারণে নয়। মহরমীর চিকিৎসার জন্য উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দ ও সরকারের সহযোগিতা করা উচিত।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিবদমান দুটি পক্ষের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। এক মামলার দুই পক্ষের আসামিরাই অন্য মামলাগুলোরও আসামি। মহরমীর কবজি উড়ে যাওয়া ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না। দুই পক্ষের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরা পলাতক আছেন। তাদের কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।