কমলগঞ্জে দড়ি দিয়ে বাঁধা চশমাপরা হনুমান উদ্ধার

কমলগঞ্জের ভাষানীগাঁও থেকে উদ্ধার করা চশমাপরা হনুমান
প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ভাষানীগাঁও গ্রামে লোকালয়ে বেড়িয়ে আসা একটি চশমাপরা হনুমান গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়। বানরটি আটকের পর গ্রামবাসীরা একটি দড়ি দিয়ে সেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। খবর পেয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ আজ শনিবার সন্ধ্যায় চশমাপরা হনুমানটিকে উদ্ধার করে।

জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ভাষানীগাঁও গ্রামে সিরাজ মিয়া গতকাল শুক্রবার বিকেলে লোকালয়ে চলে আসা চশমাপরা হনুমানটিকে নিজ বাড়ির পাশে দেখতে পান। লোকজনের সহযোগিতায় চশমাপরা হনুমানটিকে আটক করে বাড়িতে বেঁধে রাখেন। শনিবার বিকেলে খবর পেয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জের লোকজন ভাষানীগাঁও এলাকায় যান। সেখান থেকে আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চশমাপরা বানরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

লাউয়াছড়া বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোতালিব আলী প্রথম আলোকে বলেন, আটক চশমাপরা হনুমানটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন বানরটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হবে।

চশমাপরা হনুমান এ দেশের মহাবিপন্ন প্রাণী। কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত। কালো মুখমণ্ডলে শুধু চোখের চারদিকে সাদা, দেখলে মনে হয় যেন চশমা পরে আছে।

চশমাপরা হনুমান (Spectacle’s Langur, Phayre’s Langur বা Phayre’s Leaf Monkey) এ দেশের মহাবিপন্ন প্রাণী। কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত। কালো মুখমণ্ডলে শুধু চোখের চারদিকে সাদা, দেখলে মনে হয় যেন চশমা পরে আছে। Cercopithecidae গোত্রভুক্ত এই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম trachypithecus phayrei। এ দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে আকারে এগুলোই ছোট। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা এগুলো।

স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ৫৫-৬৫ সেন্টিমিটার। লেজ ৬৫-৮০ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষগুলো ৭ থেকে ৯ ও স্ত্রীগুলো ৫ থেকে সাড়ে ৭ কেজি। চোখের চশমা ছাড়া দেহের বাকি অংশের চামড়া কালো। ঠোঁটের চামড়ার ওপরও সাদার ছোপ রয়েছে। লোমবিহীন মুখমণ্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। পিঠ, দেহের পাশ ও লেজ কালচে ধূসর। বুক, পেট ও দেহের নিচটা সাদাটে ধূসর। নবজাতকের পুরো দেহের লোম কমলা, যা মাসখানেক পর থেকেই ধূসর হতে থাকে।

এগুলো বৃক্ষবাসী, কখনোই মাটিতে নামে না। ঘুম, চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, খেলাধুলা, গা চুলকানো, বিশ্রাম—সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। সচরাচর একটি শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে ১০-১৫টি একটি দলে বিচরণ করে। তবে কোনো কোনো বড় দলে দু-তিনটি শক্তপোক্ত পুরুষও থাকতে পারে। প্রতিটি দলের নির্দিষ্ট বিচরণ এলাকা রয়েছে, যেখানে অন্যগুলো প্রবেশ করে না। একই এলাকায় মুখপোড়া হনুমান ও অন্যান্য বানর প্রজাতির সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াই খাবারদাবার খেয়ে সুখে–শান্তিতে বসবাস করে।

এগুলো গাছের ডালে ডালে ঘুরে পাতা, পাতার বোঁটা, ফুল, ফল ও কুঁড়ি খায়। উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে বেশ সাহায্য করে। বাচ্চারা দীর্ঘ সময় ধরে খেলাধুলা করে। মা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যখন লাফিয়ে পড়ে, দেখতে বেশ লাগে। পাতা ও গাছে জমে থাকা পানি ও শিশির পান করে তৃষ্ণা মেটায়। ‘চেং কং’ শব্দে ডাকে। অন্যকে ভয় দেখাতে মুখে ভেংচি কাটে।

জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এগুলোর প্রজননকাল। স্ত্রী ১৫০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। দুই বছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা চার-পাঁচ মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পুরুষ পাঁচ-ছয় ও স্ত্রী তিন-চার বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর। যেহেতু বর্তমানে এগুলো মহাবিপন্ন, তাই অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই নিরীহ প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তা প্রকৃতির ভারসাম্য কিছুটা হলেও নষ্ট করবে।