কমিটি মেয়াদহীন, নেতারা বুড়ো

জেলা, উপজেলা কমিটির অনেক নেতা বিয়ে করে ঘরসংসার সামলাচ্ছেন। নেতৃত্ব না থাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে দলে।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন যে ১৯টি ইউনিট আছে, তার মধ্যে ১৫টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কমিটিতে বর্তমানে যাঁরা পদে আছেন, তাঁদের অনেকেরই ছাত্রত্ব শেষ। কেউ চাকরি, কেউ বিয়ে করে সংসার করছেন। আর যাঁরা এখনো বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরোধ। সর্বশেষ বিরোধের জেরে নিহত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবীর ইসলাম।

১১ মার্চ মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগার জেরে জেলা কমিটির সদস্য জাহিদ হাসানের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় তাকবীরের। এর জেরে তাকবীরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ ওঠে আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের। জেলার বাইরে বিরোধ তৈরি হয়েছে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগেও। সম্প্রতি দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার ফলে যে নিয়ন্ত্রণহীনতা দেখা দিয়েছে, সে কারণেই বেপরোয়া ভাব দেখা দিয়েছে কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের অধীনে থাকা ১৯টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ১২টি উপজেলা ও ৬টি কলেজ কমিটি। অপরটি বগুড়া শহর কমিটি। সবগুলো শাখাই কোনো না কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার দায়িত্বে থাকা জেলা কমিটির মেয়াদও অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসলাম হোসেন বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ এখন চলছে অছাত্র, বিবাহিত আর বুড়ো নেতৃত্বে। আমি নিজেও বিবাহিত এবং সন্তানের বাবা। অনেকেই আমার মতো বিয়েশাদি করে সন্তানের বাবা হয়েছেন। বুড়ো নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না।’

২০১৫ সালের ৭ মে জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন এবং ১২ মে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব সাংগঠনিক ইউনিটের মেয়াদ এক বছর।

আমি নিজেও সন্তানের বাবা। অনেকেই আমার মতো বিয়েশাদি করে সন্তানের বাবা হয়েছেন। বুড়ো নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না।
আসলাম হোসেন, সহসভাপতি, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ

জেলা কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। বিয়ে করে সংসারে থিতু হয়েছেন প্রায় অর্ধেক নেতা, কেউ হয়েছেন সন্তানের বাবা। কেউ ব্যস্ত চাকরি, ব্যবসায়। মাদক ব্যবসা, ভর্তি–বাণিজ্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগও আছে।

জেলা কমিটির নেতাদের মধ্যে সন্তানের বাবা হয়েছেন সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম এখন সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ মিয়া তিন বছর আগেই কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রোমানা আজিজ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হয়েছেন। সদস্য আসিফ হাসান নৌবাহিনীতে কর্মরত।

তাকবীর ইসলাম হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি আবদুর রউফ যে কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, সেই আজিজুল হক কলেজ কমিটির সদস্যসংখ্যা তিনিসহ দুজন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়েই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি চলছে পাঁচ বছর ধরে। এর মধ্যে তাকবীরের ওপর হামলার ঘটনায় রউফকে গত মঙ্গলবার বহিষ্কার করা হয়।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কলেজ কমিটিগুলো গোছানোর কার্যক্রম কেন্দ্র থেকেই স্থগিত করা হয়। ১২ উপজেলার মধ্যে ৭টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। প্রায় ছয় বছর ধরে জেলা সম্মেলন না হওয়া প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, এ নিয়ে কেন্দ্রে থেকেই তাগাদা নেই।