সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত সবাই

  • গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে তৈরি করা হয় কম্বল।

  • অনেক নারী গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে কম্বল সেলাই করেন। তাঁদের বাড়তি আয় হয়।

ফাইল ছবি

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। এতে সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কম্বল গ্রাম হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলো। এসব গ্রামের নানা বয়সী মানুষ নতুন-পুরোনো কম্বল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁদের কাজের চাপ বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।

যমুনা নদীর ভাঙনকবলিত কাজীপুর উপজেলা। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভাঙনে ফসলি জমি হারানো যেন এখানকার বাসিন্দাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকে চেষ্টা করেন বিকল্প কর্মসংস্থানের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে উপজেলার ছালাভরা কুনকুনিয়া গ্রামের আবদুল খালেক তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরি শুরু করেন। পরে বর্শীভাঙ্গা গ্রামের ছাইদুল হকও শুরু করেন এই ব্যবসা। তাঁরা ঢাকা থেকে কিনে আনা ঝুট কাপড় দিয়ে সেলাই করে তৈরি করেন কম্বল। সাইকেলে করে সেই কম্বল বিক্রি শুরু হয় গ্রামে গ্রামে। পরে এ ব্যবসা অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার শিমুলদাইড়, বর্শীভাঙ্গা, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়া, মানিকপটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপড়, রৌহাবাড়ী, পলাশপুর, বিলচতল, লক্ষ্মীপুর, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, কবিহার ও হাটশিরা গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ এখন কম্বল তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

গত শুক্রবার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ছালাভরা বাজারে কথা হয় কম্বল তৈরি করেন এমন কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, গার্মেন্টসের ফেলে দেওয়া ঝুট কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে তৈরি করা হয় কম্বল। অনেকে ঢাকা থেকে ঝুট কিনে আনেন। সেলাইয়ের কাজে পরিবারের সবাই সাহায্য করে। তবে কয়েক বছর ধরে নতুন কাপড় কেটেও চলছে কম্বল তৈরির কাজ। নতুন সেলাই মেশিনও ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে একটি লেপ তৈরি করতে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাগে। অথচ একটি ঝুট কম্বল ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ব্লেজার তৈরির পরিত্যক্ত ঝুট জোড়া দিয়ে বানানো কম্বল একদিকে যেমন হালকা, অন্যদিকে প্রচণ্ড শীতেও এ কম্বল বেশ গরম ও আরামদায়ক। গত বছর এই ঝুট প্রতি কেজি ১০-১২ টাকায় কেনা যেত। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরমের সময় প্রতি কম্বলের মজুরি ২০ টাকা এবং শীতের সময় ৪০ টাকা। অনেক নারী গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই কম্বল সেলাই করেন। ছালাভরা গ্রামের আমিনা বেগম জানান, প্রতিদিন কম্বল সেলাই করে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।

ঝুট ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝুট কম্বলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঝুট কাপড় ভারতে যাচ্ছে। এখন বেশি টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী ঝুট পাওয়া যাচ্ছে না।

কাজীপুরের ইউএনও জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী শিমুলদাইড় বাজারে কর্মসংস্থান ব্যাংকের একটি শাখা অল্প দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কেনা বেশির ভাগ কম্বল এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। কম্বল ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজীপুরের কম্বলের বহুল প্রসারের জন্য দেশের বিভিন্ন উপজেলার ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।