‘কম্বলখান দিয়া দুই মাইনসে শান্তিতে নিন্দির পারমো’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম। মঙ্গলবার সকালে খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে
প্রথম আলো

‘দুইটা মাইনসে (দুজন মানুষে) হামরা চিড়া দাগিলি (ছেঁড়া কাঁথা) উড়ি থাকি। হামার খিব কষ্ট। এই কম্বলখান দিয়া হামার উপকার হইবে। দুইটা মাইনসে শান্তিতে নিন্দির (ঘুমাতে) পারমো।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানালেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মো. আজিম উদ্দিন (৯০)। তাঁর নিজের জমিজায়গা নেই, অন্যের ভিটায় থাকেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে তাঁর দুই সদস্যের সংসার। আজিম উদ্দিন বলেন, ‘মোর একটা বেটা আছে, আলাদা খায়। কাম করি যে পাইসা পায়, তাতে তারে চলে না। হামাক দিবে কী? এর আগত মোক কাও এখান কম্বল দেয় নাই। তোমরায় প্রত্থম দিনেন।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে ১০০ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত থেকে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডোমার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মালেক সরকার, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সহিদ আহমেদ, খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম, প্রথম আলো নীলফামারী প্রতিনিধি মীর মাহমুদুল হাসান, প্রথম আলো নীলফামারী বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুধির রায়, সভাপতি নিপুন রায়, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান প্রমুখ।

লাঠিতে ভর করে বিদ্যালয় মাঠে কম্বল নিতে এসেছিলেন সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের বিরদা বর্মনী (৭০)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা মোর চারটা বেটা, সবায় মরি গেইছে, স্বামীও নাই। এলা মুই ভিক্ষা করি খাও, হামার এত্তি এলাও খিব ঠান্ডা। কম্বলখান পায়া মোর খিব উপকার হইল। তোমারও ভালো হইবে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে খুশি শীতার্তরা
ছবি: প্রথম আলো

মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের হিটলার বর্মন (৮৫) বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, বাপের দেওয়া ভিটা কোনা ছাড়া হামার কিছুই নাই, কামকাজও করির পাও না। এর আগত মুই কুনো কম্বল পাও নাই। হামার এত্তি জাড় পালায় না। না চাইতে তোমরা মোক দিনেন, তোমার ভালো হইবে।’

এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া, উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, তেলিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, স্কুলপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, জুগির ডাঙ্গাসহ এলাকার বিভিন্ন পাড়া–মহল্লা ঘুরে শীতার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি করে স্লিপ দিয়ে আসেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে থাকেন শীতার্তরা। বন্ধুসভার সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কম্বল তুলে দেন শীতার্তদের হাতে।

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংকের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।