করোনাকালে সুন্দরবনে মধু আহরণ প্রায় দ্বিগুণ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সুন্দরবনে মধু আহরণ বেড়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাবে এবার ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালর, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। মধুর সঙ্গে বেড়েছে মোমের উৎপাদনও।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বড় একটি সময় বন্ধ ছিল সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মানুষের অযাচিত বিরক্তের হাত থেকে মুক্ত ছিল সুন্দরবনের বৃক্ষ ও প্রাণিকুল। ফলে বনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ভালো হয়েছে, বেড়েছে বৃক্ষরাজির ঘনত্ব। বেড়েছে মৌমাছিসহ অনেক প্রাণীর আবাসস্থলও। ফলে এ বছর মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা মধু আহরণ করেছেন ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৭৪২ কুইন্টাল। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মধুর উৎপাদন ছিল ৪৮৮ কুইন্টাল।

এতে বন বিভাগের রাজস্বও বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মধু থেকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে রাজস্ব এসেছে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০ টাকা।

মধুর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মোমের উৎপাদনও। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩৬৬ কুইন্টাল মোম উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ২২৯ কুইন্টাল। রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোমের উৎপাদন ছিল আরও কম। মাত্র ১৫৮ কুইন্টাল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে পাস নিয়ে মধু আহরণ করেন মৌয়াল লুৎফর রহমান। তাঁর দাবি, বনে মানুষের যাতায়াত কমায় গাছের ঘনত্ব বেড়েছে। ফলে মৌমাছিরা আগের চেয়ে বেশি চাক (বাসা) বানাচ্ছে। তাই এবার মধু ও মোম অনেক বেশি পাওয়া গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বনের পরিবেশ ভালো হয়েছে। বনের অনেক জায়গায় গাছের ঘনত্ব বেড়েছে।

বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রকৃতিকে নিজের মতো থাকতে দিলে তা প্রাণ ফিরে পায়। দর্শনার্থীর চাপ না থাকায় বনের পশুপাখি, পতঙ্গরাও অবাধ বিচরণ করছে। এতে সুন্দরবনে মৌমাছিসহ সব প্রাণীর আবাসস্থল বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বেড়েছে।