করোনা শনাক্ত বেশি, টিকায় আগ্রহ কম

টিকার ইতিবাচক দিক নিয়ে প্রচার কম হওয়া, সাড়া না পড়া এবং অগ্রাধিকার তালিকার কারণে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে কম আসছেন।

খুলনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নেওয়ার আগ্রহ কমেছে। এদিকে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের ৮০ শতাংশ নগরের বাসিন্দা হলেও গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষের টিকা নেওয়ার হার কম। গ্রামে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি না থাকলেও শহরের নারীরা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টিকার ইতিবাচক দিক নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রচার কম হওয়া, সাড়া না পড়া, কুসংস্কার, অগ্রাধিকার তালিকার কারণে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে কম আসছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৫৭ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় খুলনায় মারা গেছেন ১১৮ জন। জেলার ৯ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৪ জন আর সিটি করপোরেশন এলাকায় এই সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩ জন। অর্থাৎ জেলায় মোট আক্রান্তের প্রায় ৮০ শতাংশ নগর এলাকার বাসিন্দা।

খুলনা জেলায় প্রথম দফায় করোনাভাইরাসের ১ লাখ ৬৮ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। ২০ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৯৭ হাজার ১৬৪ জন টিকা নিয়েছেন জেলার ৯টি উপজেলার টিকাকেন্দ্র থেকে। টিকা নেওয়া মানুষের মধ্যে ৯২ হাজার ৩১ জন পুরুষ আর ৬২ হাজার ৮ জন নারী। উপজেলা পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৮৪০ জন পুরুষ এবং ৪২ হাজার ৩২৪ জন নারী টিকা নিয়েছেন। এদিকে খুলনা নগরের ৫টি কেন্দ্র থেকে ৫৬ হাজার ৮৭৫ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ১৯১ জন পুরুষ এবং ১৯ হাজার ৬৮৪ জন নারী টিকা নিয়েছেন।

১৪-২০ মার্চ টিকাদান কার্যক্রম চালু থাকা পাঁচ দিনের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই পাঁচ দিনে নগর এলাকার পাঁচটি টিকাদানকেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৩৯০ জন টিকা নিয়েছেন। একই সময়ে ৯ উপজেলার টিকাকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ১৫৬ জন টিকা নিয়েছেন।

ইপিআই খুলনা জেলা কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান (সিসিটি) মহব্বত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় টিকা নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এক উপজেলার জন্য বরাদ্দ টিকা অন্য উপজেলার কাজে লাগানো হচ্ছে।

দাকোপ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন। প্রত্যন্ত এই উপজেলায় এত মানুষ কীভাবে এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হলেন, জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রথম টিকার যা বরাদ্দ ছিল, তার থেকে দুই দফায় পরে সাড়ে ৯ হাজার ডোজ আনা হয়েছে। ১৯ হাজার ৪৭০ জনকে টিকা দেওয়া শেষ। মূলত আমরা শুরুর দিকে বিভিন্ন বাজারের মাইকিং করে মেলার মতো করেছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন দপ্তর এবং এনজিওদের সহায়তায় সেখানে আমরাই নিবন্ধন করে দিয়েছিলাম। যাঁরা বয়স্ক ভাতা পান, সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে তাঁদের টিকার আওতায় আনা হয়। সব মিলিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে।’

খুলনা নগরের পূর্ববানিয়া খামার এলাকার অনন্যা হক বলেন, ‘আমি এখনই টিকা নেব না। দেখছি, আরও দেখব, টিকা নেওয়ার পর মানুষের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না।’

নগরের ময়লাপোঁতা মোড়ের একজন নিরাপত্তারক্ষী মো. রফিক বলেন, তাঁদের বাড়ির আশপাশে কেউ টিকা নেননি। কেউ টিকা নেওয়ার কথাও বলছেন না। এ জন্য তাঁদেরও নেওয়া হয়নি। সবাই নিতে লাগলে তখন আগ্রহটা বাড়ত।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের হাতে ১৪ হাজারের মতো টিকা আছে। টিকা নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে টার্গেট কিন্তু প্রায় পূরণ হয়েছে। প্রথম দিকে বেশি মানুষ টিকা নেওয়ায় এখন মানুষ কিছুটা কম আসছে।’

খুলনা নগর এলাকায় টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘নগরে টিকা নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কম। তবে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। আশা করি এই হার শিগগির বাড়বে।’