করোনা সংক্রমিতদের বাড়িতে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন

প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার করোনা আক্রান্ত ইব্রাহীম হোসেনের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে খাদ্যসহায়তা ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত দুই দিনে ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১০টি পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের চাল, ডাল, তেল ও বিভিন্ন ফল দেওয়া হয়।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চরভয়রা গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন (৩৩) ওমানপ্রবাসী ছিলেন। করোনার কারণে গত বছর অক্টোবর মাসে গাড়িচালকের কাজটি হারান। হাতে যা টাকা ছিল তা দিয়ে দুই মাস সেখানে অবস্থান করে নতুন কাজ খোঁজেন। কোনো কাজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। চলতি বছরের ২৯ মার্চ তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি অর্থসংকটে হতাশ হয়ে পড়েন।

বৃহস্পতিবার ইব্রাহীম হোসেনের মুঠোফোনে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান একটি খুদে বার্তা পাঠান। করোনার কারণে শারীরিক ও আর্থিক সংকটে থাকলে পাশে দাঁড়াতে চান এমন কথা জানানো হয় খুদে বার্তায়। দেওয়া হয় ডিসি ও সিভিল সার্জনের ফোন নম্বর।

ওই খুদে বার্তা দেখে ইব্রাহীম হোসেন ডিসিকে ফোন করেন। পরিবার নিয়ে সংকটে আছেন ও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এমন কথা জানান। এরপরই ইব্রাহীমের বিস্তারিত খোঁজ নেয় ডামুড্যা উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সকালে একজন চিকিৎসক নিয়ে চরভয়রা গ্রামে যান ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে এলাহী। চিকিৎসক তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। আর খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, তেল, আলু ও বেশ কিছু ফল দেওয়া হয়।

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ওমান থেকে দেশে ফিরে চরম অর্থসংকটে পড়েন। স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান নিয়ে কষ্টের দিন পার করছিলেন। এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হন। মোবাইলে ডিসির মেসেজ দেখে তাঁকে ফোন করে অসহায় পরিস্থিতি কথা জানান। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে করোনা আক্রান্তদের আলাদা রাখা প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাঁরা সংকটের কথা জানাচ্ছেন, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন এস এম আব্দুল্লা আল মুরাদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তিরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করছে প্রশাসন, আর তাঁরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক যোগাযোগ করায় তাঁরা মানসিক স্বস্তি পাচ্ছেন। আর হোম আইসোলেশনটাও কার্যকর হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক বছরে শরীয়তপুরে ১০ হাজার ৫৭৭ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৬৩ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০ জন।