করোনাকালে ৩৫ প্রাণী উদ্ধার, অবমুক্ত ১৫

বাচ্চাসহ মেছো বাঘ। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনেছবি: প্রথম আলো

করোনাকালের মধ্যেও বন্য প্রাণীর সেবা ও পরিচর্যা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়া ৩৫টি প্রাণী উদ্ধার করে সেবা ফাউন্ডেশনে নিয়ে আসা হয়েছে। এরই মধ্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে ১৫টি প্রাণীকে করা হয়েছে অবমুক্ত।

ফাউন্ডেশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও পরিচর্যাকেন্দ্র বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু দর্শনার্থী ভিড় করেন। ছুটির দিনে এই ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও এখানে শিক্ষার্থীরাও আসে প্রাণীগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে এই ফাউন্ডেশনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে এক দিনের জন্যও বন্ধ নেই প্রাণীগুলোর সেবা ও পরিচর্যা কার্যক্রম। ছোট-বড় খাঁচার ভেতর বিভিন্ন প্রাণী নিরিবিলি সময় পার করছে। খাঁচার মধ্যেই পায়চারি, লাফালাফি ও ছোটাছুটি করছে। প্রাণীগুলোর চঞ্চলতায় আশপাশ মুখরিত হয়ে উঠেছে। একটি অজগর বাচ্চা দিয়েছে ৩০টি। বাচ্চাগুলো বেড়ে উঠছে। আরও একটু বড় হলে বাচ্চাগুলো সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছাড়া হবে। একটি মেছো বাঘ বাচ্চা দিয়েছে দুটি। লজ্জাবতী বানর ও বাদামি বানর একটি করে বাচ্চা প্রসব করেছে। বেগুনি কালিম পাখি দিয়েছে চারটি বাচ্চা।

বনের মধ্যে তো এখন মানুষ যাচ্ছে না। মানুষের উৎপাত নেই। ফলে অনেক প্রাণী বাইরে বেরিয়ে আসছে। মূলত খাদ্যসংকটের কারণে এরা বেরিয়ে আসে। মানুষের হাতে ধরা পড়ে। কোনো কোনো প্রাণী মারা যায়। সেই খোঁজই হয়তো আমরা জানতে পারি না। সংরক্ষিত বনে বেশি বেশি করে বুনো ফলের গাছ লাগানো দরকার
সজল দেব, পরিচালক, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, শ্রীমঙ্গল
বাচ্চাসহ লজ্জাবতী বানর। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে
প্রথম আলো

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনটি বলছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে জনসাধারণের হাতে ৩৫টি বিভিন্ন জাতের প্রাণী ধরা পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পেরে এসব উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে চারটি অজগর, তিনটি তক্ষক, চারটি লজ্জাবতী বানর, একটি সবুজ ফণীমনসা, একটি লাল ফণীমনসা, চারটি সবুজ বোড়াল সাপ, দুটি বাদামি বানর, বিভিন্ন জাতের ছয়টি পাখি, একটি খরিশ সাপ, একটি কোবরা সাপ, একটি দাঁড়াশ সাপ, একটি উল্লুক, চারটি বনবিড়াল, একটি মায়া হরিণ ও একটি গুইসাপ। এসব প্রাণীর মধ্যে ১৫টি প্রাণী বিভিন্ন সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। অবমুক্ত করা প্রাণীগুলোর মধ্যে আছে দুটি অজগর, দুটি সবুজ বোড়াল, একটি সবুজ ফণীমনসা, একটি লজ্জাবতী বানর, একটি কোবরা, একটি গোখরা, একটি দাঁড়াশ, দুটি সরালি ও চারটি লক্ষ্মী প্যাঁচা।

ফাউন্ডেশনটির পরিচালক সজল দেব সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সেবা ফাউন্ডেশনে প্রতিদিনই ২০ থেকে ২৫ জন দর্শনার্থী আসতেন। ছুটির দিনে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বেশি আসত। প্রায় পাঁচ মাস ধরে এখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ। কিন্তু প্রাণী উদ্ধার, চিকিৎসা, সেবাশুশ্রূষা ও পরিচর্যা সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রাণী ধরা পড়েছে। আবার অবমুক্তও করা হয়েছে। বেশ কিছু আবার বাচ্চাও দিয়েছে। সেগুলো স্বাভাবিক নিয়মে খাবার খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে ও বড় হচ্ছে।

সজল দেব আরও বলেন, ‘বনের মধ্যে তো এখন মানুষ যাচ্ছে না। মানুষের উৎপাত নেই। ফলে অনেক প্রাণী বাইরে বেরিয়ে আসছে। মূলত খাদ্যসংকটের কারণে এরা বেরিয়ে আসে। মানুষের হাতে ধরা পড়ে। কোনো কোনো প্রাণী মারা যায়। সেই খোঁজই হয়তো আমরা জানতে পারি না। সংরক্ষিত বনে বেশি বেশি করে বুনো ফলের গাছ লাগানো দরকার।’