করোনার উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় অনাগ্রহ

করোনাভাইরাস পরীক্ষা
প্রতীকী ছবি

স্কুলছাত্র মো. নয়ন (১৪) ১০-১২ দিন ধরে ভুগছে জ্বরে। সঙ্গে রয়েছে সর্দি, কাশি, গলা ও মাথাব্যথা। গতকাল সোমবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার মা। চিকিৎসক তাকে কিছু ওষুধ লিখে দেন। এরপর নমুনা দেওয়ার কথা বললে সেটি দিতে অনাগ্রহ দেখান মা-ছেলে দুজনই। পরে নমুনা না দিয়েই তাঁরা চলে আসেন বাড়িতে। এতে অস্বস্তিবোধ করেন ওই চিকিৎসক।

ঘটনাটি গতকাল সোমবার দুপুরের। ১২টার দিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বর নিয়ে আসা ওই স্কুলছাত্রের বাড়ি উপজেলার কলাদী এলাকায়। সে স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সম্প্রতি এ উপজেলায় তার মতো অনেকের শরীরে এ ধরনের উপসর্গ থাকলেও করোনাভীতির কারণে অধিকাংশই নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। কেউ কেউ জ্বর-সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছেন না। নিজেরাই নিজেদের ‘চিকিৎসা’ করছেন। করোনা নিয়ে সামাজিক ভীতির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমনটা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা তাঁদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এক মাস ধরে সেখানকার বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক লোক বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি রোগী আসছেন জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁচি, গলা ও মাথাব্যথা নিয়ে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানকার বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন সাত শতাধিক লোক। এর মধ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁচি ও গলাব্যথা নিয়ে এসেছেন ২৯০ জন। এঁদের মধ্যে করোনার নমুনা দিয়েছেন মাত্র ১৫ জন। বাকি ২৭৫ জনই নমুনা দেননি।

তিন-চার দিন ধইরা জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় কষ্ট পাইতাছি। মনে অয় আমার করোনা অইছে। তয় বাড়িতেই ওষুধ-পানি খাইতাছি। ডাক্তারের কাছে গিয়া কী অইব। হেগো কাছে গেলে করোনা ধরা পড়ব। আমার বদনাম অইব। মাইনষে তেরা চোখে চাইব। এলিগা নমুনা দিমু না। আল্লায় যা করার তা করব।
মো. সালাউদ্দিন, রূপসী পল্লি এলাকার রিকশাচালক

উপজেলা সদরের স্কুলশিক্ষক সোহেল আহম্মেদ বলেন, করোনা নিয়ে প্রথম দিকে সবার মধ্যে যে সচেতনতা ছিল, এখন তা নেই। করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকে ভুগলেও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। চিকিৎসকের পরামর্শও নিচ্ছেন না। নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসক সেজে ওষুধ খাচ্ছেন। এটি করতে গিয়ে তাঁরা নিজেদেরও ক্ষতিও করছেন, অন্যকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন।

রূপসী পল্লি এলাকার রিকশাচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘তিন-চার দিন ধইরা জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় কষ্ট পাইতাছি। মনে অয় আমার করোনা অইছে। তয় বাড়িতেই ওষুধ-পানি খাইতাছি। ডাক্তারের কাছে গিয়া কী অইব। হেগো কাছে গেলে করোনা ধরা পড়ব। আমার বদনাম অইব। মাইনষে তেরা চোখে চাইব। এলিগা নমুনা দিমু না। আল্লায় যা করার তা করব।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব কিশোর বণিক বলেন, কয়েক দিন ধরে তাঁর হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে অনেক লোক আসেন। কিন্তু নমুনা দেওয়ার কথা বললে তাঁরা অনাগ্রহ দেখান। তড়িঘড়ি করে বাড়িতে ফিরে যান। এটি হতাশাজনক ও অস্বস্তিকর। এতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, তাঁর উপজেলায় আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৩০টি। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ২১৭ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮৫ জন।