করোনার চক্করে আটকে গেছে কমলগঞ্জের প্রবাসীদের রুটিরুজি

করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরে আটকা পড়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসীরা। কারও কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মাসের পর মাস কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য তাঁরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি থেকে কমলগঞ্জে আসা পতনঊষার ইউনিয়নের আহমেদ আলী অভিযোগ জানান, গত ১০ জানুয়ারি দুই মাসের জন্য আবুধাবি থেকে তিনি দেশে আসেন। দুই মাস পর গত ১৯ মার্চ প্রবাসে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য ৩৮ হাজার টাকায় টিকিটও করেছিলেন। পরে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য ফ্লাইট বাতিল হয়। দ্বিতীয় দফায় সিলেটে গিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন এবং প্রতিবেদন সংগ্রহ করে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ১৯ আগস্টের টিকিট করেছিলেন। এরপর সে ফ্লাইটও বাতিল হয়ে যায়।

আহমেদ আলী বলেন, ‘দেশে আসার পর থেকে টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। তারপর বারবার খরচ করেও প্রবাসের কর্মস্থলে যেতে পারছি না। তা ছাড়া দুই দফা অনলাইনেও আবেদন করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন নিঃস্ব হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’  

ওমান থেকে ছুটিতে কমলগঞ্জে আসা পতনউষার ইউনিয়নের সালেহ আহমদ জানান, চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মার্চ এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে দেশে আটকা পড়েন। ওমানের কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারেননি। গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

সালেহ আহমেদ উদ্বেগ নিয়ে বলেন, ‘পরিবার–পরিজন নিয়ে কীভাবে চলব তা ভেবে পাচ্ছি না। আমরা প্রবাসে ফেরত যেতে কিংবা সরকারি প্রণোদনা পেতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও কোনো ধরনের সুরাহা পাচ্ছি না।’

কাতার থেকে আসা শমশের নগরের প্রবাসী এমলাক মিয়া বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সাড়া পাইনি।’

প্রবাসী সোহেল আহমদ বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকারি উদ্যোগে কর্মস্থলে তাঁদের ফেরত পাঠানোর দাবি জানান।

করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রবাসীরা অর্থাভাব, দুর্ভোগ ও কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা চেয়ে গত ৭ জুলাই পতনঊষার ইউনিয়নের প্রবাসীরা কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। ১১ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের সহায়তা পাওয়ার দাবির কথা আবারও তুলে ধরেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে কমলগঞ্জের প্রায় অর্ধশত প্রবাসী এ অভিযোগ তুলেছেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও আশেকুল হক বলেন, ‘সরকার প্রবাসীদের প্রতি সব সময় আন্তরিক রয়েছেন। তাঁদের লিখিত আবেদন যথাসময়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তা ছাড়া প্রবাসে যেতে আগ্রহীদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।’

মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, প্রবাসীদের একটি ফরম পূরণ করে ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া আপাতত তাঁদের জন্য আর কোনো নির্দেশনা আসেনি।