করোনায় কমেছে গাছের চারা বিক্রি ও আয়

উপজেলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে চারা উৎপাদন করা হয়। চারা প্রদর্শনী ও বিক্রি করে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান।

জমি থেকে চারা ‍তুলে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গায়
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে নার্সারি ব্যবসায়। খুলনার ফুলতলার প্রতিটি নার্সারিতে পড়ে আছে লাখ লাখ বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। গত দুই বছর বৃক্ষমেলা না হওয়ায় আশানুরূপ বিক্রি হয়নি উৎপাদিত চারা। করোনা সংক্রমণের কারণে ক্রেতারাও যাচ্ছেন না গাছের চারা কিনতে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন নার্সারিমালিকেরা। কমে গেছে চারা উৎপাদকারী কৃষকদের আয়ও।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফুলতলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে চারা উৎপাদন করা হয়। চারা প্রদর্শনী ও বিক্রি করে, এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৮২টি। কমপক্ষে ৩০০ কৃষক চারা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। আর প্রতিদিন নার্সারিগুলোতে কাজ করেন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক। আয়ের অন্যতম উৎস হওয়ায় ফুলতলাকে নার্সারি জোন হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা চলছে।

নার্সারিমালিকেরা জানান, বছরে চারা বিক্রির দুটি মৌসুম। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। তবে সেটা মূল ব্যবসা নয়। আর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রি হয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। মূলত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাস সামনে রেখে সারা বছর বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন করেন নার্সারিমালিকেরা। কিন্তু গত দুই বছর করোনা মহামারি ও মূল চারা বিক্রির সময়ে বিধিনিষেধ থাকায় চারার ক্রেতা ছিলেন খুবই কম। বিশেষ করে খুলনার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে যাঁরা চারা কিনতে আসেন, তাঁরা আর আসছেন না। এতে একদিকে যেমন চারা বিক্রি কম হচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদিত চারাগুলো বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

ফুলতলা উপজেলা বাজার থেকে যশোরের দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলেই বেজেরডাঙ্গা। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-যশোর সড়কের দুই পাশেই অসংখ্য নার্সারি। নানা জাতের ছোট-বড় চারা রয়েছে সেখানে। প্রতিটি নার্সারির সঙ্গে সড়কের পাশে রয়েছে ছোট ঘর। ওই ঘরের সামনে তাঁবু টানিয়ে বা ঘরের চারা আরেকটু বড় করে তৈরি করা হয়েছে শেড। সেখানে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা জমি থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে।

এমনই একটি নার্সারি হলো মেসার্স হাইব্রিড নার্সারি। জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও বীজ আমদানি করে থাকে। বিক্রয়কেন্দ্রের এক পাশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে ছিলেন ওই নার্সারির মালিক সরদার আবদুস সালাম। সামনে জমি থেকে তুলে নিয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির শত শত চারা। ৪০ একর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুল, ফল ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

আবদুস সালাম বলেন, করোনার কারণে গত বছর থেকে অনেক কম চারা বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ভোলাসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে বহু ক্রেতা আসতেন। তাঁরা হাজার হাজার চারা নিয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে ওই ক্রেতারা আর আসছেন না। এখন মূলত ক্রেতা বলতে রয়েছেন খুলনা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ।

ফুলতলা নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল বাসার বলেন, উপজেলার অধিকাংশ মানুষ নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎসও এটি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর চারা বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে। এতে এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।