করোনায় কাজ হারিয়ে সিরাজুল এখন ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতা

করোনাকালে কাজ হারিয়ে সিরাজুল এখন ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতা
ছবি: প্রথম আলো

বাইসাইকেলের হ্যান্ডেলের সঙ্গে ঝোলানো সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘এখানে গরম শিঙাড়া পাওয়া যায়, অর্ডার দিলে বিরিয়ানি ও তেহারি সরবরাহ করা হয়।’ একটি মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া আছে। নাটোর সদরের কানাইখালী এলাকায় গতকাল সোমবার দুপুরে বাইসাইকেলটি দেখে কৌতূহল জাগে। সাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর নাম সিরাজুল ইসলাম (৩৬)। করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। সংসার চালাতে বাইসাইকেলে করে খাবার বিক্রি করছেন তিনি।

সিরাজুলের বাড়ি সদর উপজেলার তেবাড়িয়া উত্তরপাড়ায়। বাড়িতে আছে স্ত্রী ও দুই ছেলে। বড় ছেলে বাইজিদ হোসাইন (১১) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট ছেলের বয়স আট মাস। ছোট ছেলের জন্য দুধ কেনার পাশাপাশি প্রতিদিন খাবার খরচ বাবদ ৪০০ টাকা লাগে। করোনার আগে শহরের মুড়িপট্টির একটি খাবার হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন তিনি। যা পেতেন, তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে যেত। হোটেলটি বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা। উপার্জনের বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে তিনি খাবার বিক্রির ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা শুরু করেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর সহযোগিতায় বাড়িতে শিঙাড়া বানান তিনি। সাইকেলের পেছনে বাঁধা ঝুড়িতে বিশেষ কায়দায় রেখে দেন গরম শিঙাড়া। সামনের হ্যান্ডেলে পানি ও সালাদের ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখেন। অর্ডার দেওয়া বিরিয়ানির প্যাকেটও ভরে নেন ব্যাগে। প্রতিদিন বেলা ১১টায় শুরু হয় খাবার বিক্রি। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো ঠেলে নিয়ে বেলা তিনটা পর্যন্ত শহরের অলিগলিতে ঘুরে খাবার বিক্রি করেন। একেকটি আলুর শিঙাড়া পাঁচ টাকা ও ডিমের শিঙাড়া সাত টাকায় বিক্রি করেন। পানি ও সালাদের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। খাবারের অর্ডার থাকলে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেন। এতে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টাকা লাভ হয়। এই টাকায় চলে সংসারের চাকা।

শহরের মাদ্রাসা মোড়ের বাসিন্দা পারভেজ হোসেন বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও শহরের কানাইখালী ও মাদ্রাসা মোড়ে তাঁদের মতো কর্মজীবী মানুষের আনাগোনা থাকে। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় তাঁরা চা-শিঙাড়ার জন্য অপেক্ষা করেন। সিরাজুল তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দেন।

ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাইকেলে করে খাবার বিক্রিতে খাটুনি বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয়। তবু সংসার চালানোর খরচটা উঠে আসায় তিনি খুশি। খেয়েপরে ভালো আছেন বলে জানালেন। তবে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসায় করোনা নিয়ে কিছুটা ভয়ে আছেন বলে জানালেন তিনি।