করোনায় ছেলের পর বাবাও চলে গেলেন

বাবা আবদুজ জাহের এবং ছেলে মহিন উদ্দিন।
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত ২৭ জুলাই ছেলের মৃত্যু হয়। এক মাস না যেতেই ছেলের পথ ধরে করোনাভাইরাসে প্রাণ হারালেন বাবাও। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বাবা আবদুজ জাহের (৬০) মারা যান। তিনি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার অর্জুনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে আবদুজ জাহেরের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আবদুজ জাহেরের ভাতিজা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৭ জুলাই সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে তাঁর চাচাতো ভাই মহিন উদ্দিন (৩৫) (আবদুজ জাহেরের ছেলে) কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর চাচা মানসিকভাবে অনেকখানি ভেঙে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে লোকজনকে সংক্রমণের ব্যাপারে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন।


আবদুল কাইয়ুম জানান, করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় এক সপ্তাহ আগে তাঁর চাচাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, আবদুজ জাহের ছেলের লাশ দেখারও সুযোগ পাননি। মক্কা নগরীতেই ছেলের লাশ দাফন হয়। মহিন উদ্দিন তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলে দেশে বাস করেন।

সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনবাগের রাজনৈতিক নেতাদের তিনি মাঠে পাননি। পেয়েছেন কেবল আবদুজ জাহেরদের মতো ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের। তিনি বলেন, ‘এলাকায় কাজ করতে গিয়েই আবদুজ জাহের আক্রান্ত হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ভাইরাসটির কাছে হেরে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেদনার দিক হলো, গত মাসে বিদেশের মাটিতে তাঁর ছেলেও একই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন।’

এদিকে নোয়াখালীতে সোনাইমুড়ী উপজেলায় কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে গতকাল রোববার সকালে রোকেয়া বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়।
তাঁর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা ফোকাল পারসন বিবেক দেব।

জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে নতুন করে ৪৭ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৭৮। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৯ জন।