কর্মকর্তার সই জাল করে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ওই কর্মচারী গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পলাতক।

জামালপুর জেলা

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মচারীর প্রায় ৪২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ চারজনের সই জাল করে তিনি ওই টাকা তুলে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।

কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে সাকিবুল হাসান ওরফে দুখু ২০১৯ সালে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালে তিনি নিয়োগ পান। এরপর বিভিন্ন সময়ে হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের চার কর্মকর্তার সই জাল করে এবং ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সাকিবুল ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮২ টাকা আত্মসাৎ করেন।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হান গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থানায় সাকিবুলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ছাড়া সই জাল করে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগে ২৩ ফেব্রুয়ারি সাকিবুলের বিরুদ্ধে তিনি আরও একটি জিডি করেন।

স্নিগ্ধ রায়হান বলেন, ‘সাকিবুলের বাবা জয়নাল আবেদীন আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি ছেলের নেওয়া টাকা তিন দফায় ফেরত দিতে সময় চেয়েছেন। সরকারি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি সময় দিতে পারি না। সিদ্ধান্ত নেবে মহাহিসাবরক্ষণ কার্যালয়।’

জিডি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী জিসানের নামে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ টাকা, অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনের নামে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৩০০ টাকা, কম্পিউটার অপারেটর রফিকুল হাসানের নামে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং ইদ্রিশ আলীর নামে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮২ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচার দিয়ে ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে। অবসরকালীন ভাতা হিসেবে ওই টাকা তোলা হয়। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, যাঁদের নামে টাকা তোলা হয়েছে, তাঁরা এই কার্যালয়ের কর্মচারীই নন। ওই টাকা তুলে নেওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ১৪ কর্মকর্তা–কর্মচারীর বেতন–ভাতা এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী রকিব হাসান বলেন, ‘সাকিবুল হাসান আমার কার্যালয়ের ৪ ভুয়া কর্মচারীর নাম ব্যবহার করে ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ২৮২ টাকা আমাদের ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নিয়ে গেছেন। এতে আমাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকায় দুই মাস ধরে আমারসহ কার্যালয়ে ১৪ কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রয়েছে।’

সাকিবুলের বিরুদ্ধে করা জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মফিজ উদ্দিনের অবসরকালীন ভাতার ৬ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকাও তুলে নিয়ে গেছেন সাকিবুল। তিনি এ টাকা সোনালী ব্যাংক সরিষাবাড়ী উপজেলা কমপ্লেক্স শাখা থেকে উত্তোলন করেছেন।

সাকিবুলের বাবা এসেছিলেন। টাকা ফেরত দিতে সময় চেয়েছেন। সরকারি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি সময় দিতে পারি না। সিদ্ধান্ত নেবে মহাহিসাবরক্ষণ কার্যালয়।
স্নিগ্ধ রায়হান, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন আহমদের কার্যালয়ের ১১ লাখ ৬৯ হাজার টাকার একটি বিলে স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে সন্দেহ হয়। পরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হান কর্মচারী সাকিবুল হাসানকে ডেকে পাঠান। কিন্তু সাকিবুল ধরা পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। সাকিবুল সাবেক উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রমজান আলী, বর্তমান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হান, সুপারিনটেনডেন্ট ফরহাদ হোসেন ও অডিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সই জাল করে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক, ময়মনসিংহ কার্যালয় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু হয়েছে।

পলাতক থাকায় কর্মচারী সাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় হিসাবনিয়ন্ত্রক মো. শাহজাহান সরকার বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন আহমদ জানান, ‘এ বিষয়ে এখনো আমি কোনো কিছু জানি না। আমার কাছে অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’