‘কলমাকান্দায় ট্রলারডুবি হয় চালকের অদক্ষতায়’

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ৯ সেপ্টেম্বর ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চালকের (৩৫) অদক্ষতার কারণেই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছিল। রোববার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সোমবার দুপুরে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৯ সেপ্টেম্বর সকালে সুনামগঞ্জের ধরমপাশার মধ্যনগর এলাকা থেকে প্রায় ৩০ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনার উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে কলমাকান্দার রাজনগর গ্রাম লাগোয়া গুমাই নদে একটি বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে ট্রলারটি উল্টে যায়। এতে ৬ শিশুসহ ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রধান ও কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানাকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা প্রশাসক জানান, ট্রলারচালক সোহাগ মিয়া গুমাই নদের রাজনগর এলাকায় একটি ঘাটে অপেক্ষারত কয়েকজন যাত্রী ওঠাতে গিয়ে পাশাপাশি চলা বাল্কহেডটিকে অতিক্রম করে ডান দিক ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। এ সময় বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে ট্রলারটি উল্টে ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ধরমপাশা উপজেলার ইনাতনগর গ্রামের লুৎফুন্নাহার (৩২) তাঁর দুই বছরের ছেলে ইয়াসিনকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান। লুৎফুন্নাহার ডুবে যাওয়া ট্রলারটি থেকে বের হয়ে ইয়াসিনকে এক হাতে ধরে সাঁতার কাটতে শুরু করেন। কিন্তু একপর্যায়ে ছেলেসহ ডুবে মারা যান। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা মা-ছেলের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন। এ ছাড়া ওই ট্রলারে থাকা লুৎফুন্নাহারের স্বামী আবদুল ওয়াহাব (৪০) পাঁচ বছরের মেয়ে মনিরা আক্তারকে কোলে নিয়ে সাঁতার কাটতে শুরু করেন। কিন্তু তীব্র স্রোতে শিশুটি ডুবে যায়। মনিরার লাশ দুই দিন পর উদ্ধার করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটিতে লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ কোনো রকম সুরক্ষাসামগ্রী ছিল না। এ ছাড়া ওই সময়ে মধ্যনগর ঘাট থেকে সিরিয়ালের যে ট্রলার চলার কথা ছিল, তা না করে অপেক্ষাকৃত ছোট আয়তনের ট্রলার চালানো হয়েছিল।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ জানিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জেলায় নৌপথগুলো নির্ধারণ করে তালিকা প্রণয়ন করা, ওই পথে কতগুলো ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে, তা নিবন্ধনের আওতায় আনা, নৌযানগুলোর ফিটনেস সনদ প্রদান, প্রশিক্ষণসহ দক্ষ চালক নিয়োগ, বৈরী আবহাওয়ায় নৌ চলাচল বন্ধ রাখা প্রমুখ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আবদুল ওয়াহাব বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় মামলা করেন। মামলায় ট্রলারচালক সোহাগ মিয়াসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালেও এখনো সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।