কলমাকান্দায় থই থই পানি, দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে কলমাকান্দার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩৪৩টি গ্রামের মধ্যে তিন শতাধিক গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলার মধ্যে কলমাকান্দায় বেশি বন্যা হচ্ছে। ক্রমশ পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তিনটি উপজেলায় প্রচুর মানুষ পানিবন্দী। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শুকনা খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসক জানান, কলমাকান্দায় ইতিমধ্যে সাতটি আশ্রয়ণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের খাবারসহ সব ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলা সদরের চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ বেশ কিছু এলাকায় এখন হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি। মানুষের বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। উপজেলার সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, চান্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, উদয়পুর উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে তিন সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গোবাদি পশুর খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা মোড় এলাকার রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী প্রণয় তালুকদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাই। শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে এসে দেখি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট নষ্ট হয়ে গেছে। গত দুই বছর আগের চেয়ে এবারের বন্যার ব্যাপকতা আরও বেশি।’
উপজেলা বাসাউড়া গ্রামের বাসিন্দা ও কলমাকান্দা সরকারি কলেজের প্রভাষক রোপণ সাহা বলেন, কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ২ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি বাড়ছে, মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, মোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালীসহ ছোট-বড় সব নদ–নদীর পানি বাড়ছে। শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৫ মিলিমিটার।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, কলমাকান্দার সব এলাকায়ই এখন বন্যার পানি। অবস্থা তেমন ভালো নয়, ইউএনও কার্যালয়, উপজেলা পরিষদসহ শহরে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি। মানুষ আশ্রয় নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।