কলেজছাত্রের সততায় হারানো টাকা ফিরে পেলেন পুলিশ কর্মকর্তা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিএসবির সহকারী উপপরিদর্শক আল আমীন সুহেলের হারিয়ে যাওয়া ২৯ হাজার টাকা পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন কলেজছাত্র বিদ্যুৎ দাস। আজ বুধবার তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে তাঁর হারানো টাকা ফিরিয়ে দেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধরমপাশা উপজেলার সুখাই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান বিদ্যুৎ দাস সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দুই মাস ধরে জগন্নাথপুর বাজারে ডেনিশ কনডেনন্স মিল্ক কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করেন। আল আমীন সুহেল জগন্নাথপুর থানায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিএসবির সহকারী উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। গতকাল মঙ্গলবার পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে উপজেলার ইসহাকপুর এলাকা থেকে জগন্নাথপুর থানায় মোটরসাইকেলে ফেরার পথে জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্ট এলাকায় খামের ভেতর থাকা ২৯ হাজার টাকা আল আমীন সুহেলের পকেট থেকে পড়ে যায়। পরে খামভর্তি টাকা পান কলেজছাত্র বিদ্যুৎ দাস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও তাঁদের ভাষ্য থেকে জানা গেছে, সহকারী উপপরিদর্শক আল আমীন সুহেল যখন বুঝতে পেরেছেন, তাঁর স্ত্রীকে পাঠানোর জন্য জমা করা টাকাগুলো হারিয়ে গেছে, তখন তিনি থানার সহকর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন। অন্যদিকে টাকা পেয়ে মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগেন বিদ্যুৎ দাস। তিনি তাঁর বন্ধুদের পরামর্শে জগন্নাথপুর বাজারের দুটি মসজিদে কিছু টাকা পাওয়া গেছে ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করেন। এতে কোনো সাড়া না পাওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরে জগন্নাথপুর বাজারে মাহিনা রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে বন্ধু জুবায়েরকে দিয়ে কিছু টাকা পাওয়া গেছে বলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এ স্ট্যাটাসটি জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়িচালক মাহাতাব হোসেনের নজরে আসে। তারপর যোগাযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দাস নিশ্চিত হন টাকাগুলো পুলিশ কর্মকর্তার।

আল আমীন সুহেল জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে একজন ভালো মানুষ টাকাগুলো পাওয়ায় ফিরে পেলাম। সত্যি আমি খুব খুশি। তাই নিজের ফেসবুকে অনুভূতি লিখেছি স্যালুট বিদ্যুৎ দাস, লোভ আপনাকে পরাজিত করতে পারেনি। এখনো বিশ্বাস হারিয়ে যায়নি বিদ্যুৎ দাস তাঁর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকাগুলে পাঠাতে চেয়েছিলাম। টাকা হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়ি। টাকা ফিরে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’

বিদ্যুৎ দাস বলেন, ‘রাত সাড়ে নয়টায় পৌর পয়েন্টে রাস্তায় পড়ে থাকা খাম দেখে হাতে নিই। পরে দেখি খামভর্তি টাকা। দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই কীভাবে প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। সহকর্মীদের পরামর্শে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিই। এতে কোনো কাজ হয়নি। আমার ফেসবুকে অল্পসংখ্যক ফলোয়ার থাকায়, আমি বন্ধু জুবায়েরকে দিয়ে তাঁর ফেসবুক থেকে টাকা পাওয়া গেছে বলে একটি স্ট্যাটাস দিলে প্রকৃত মালিকের সন্ধান পাই। প্রকৃত মালিকের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে পেরে আনন্দিত।’