কষ্টের আখ এখন বোঝা

নির্দিষ্ট সময়ে চিনিকলে সরবরাহ করতে না পারায় খেতের আখ শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। সম্প্রতি পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড় চিনিকলের আওতায় গত মৌসুমে ১৪ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা এলাকার কৃষক মাধব চন্দ্র সেন (৫২)। চলতি মাড়াই মৌসুমের শেষ দিকে এসেও তিনি মাত্র দুই বিঘা জমির আখ ঠাকুরগাঁও চিনিকলে সরবরাহ করতে পেরেছেন। বাকি ১২ বিঘা জমির আখ এখনো খেতেই দাঁড়িয়ে আছে।

শুধু মাধব চন্দ্র সেনই নন, চলতি মাড়াই মৌসুমে পঞ্চগড় চিনিকলে সরকারিভাবে মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই খেতের আখ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি। জেলায় চাষ হওয়া আখ এখন মাড়াইয়ের জন্য পাঠানো হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে। নির্দিষ্ট সময়ে চিনিকলে আখ দিতে না পারায় দিন দিন খেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে আখ। এতে ওজনও কমে যাচ্ছে। দাম কম হলে চাষের খরচ ওঠা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।

গত সোম ও মঙ্গলবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার সুরিভিটা, ধাক্কামারা, দশমাইল, অমরখানা, বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি, গাইঘাটা, ধনিপাড়া, ধকরাহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাড়াই উপযোগী অর্ধেকের বেশি আখ এখনো কৃষকের খেতে। চিনিকল বন্ধ শোনার পর থেকে নতুন করেও আখ চাষ করছেন না চাষিরা। চিনিকল কর্তৃপক্ষও আর আখ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে না। ফলে পুরোনো আখ খেতগুলোতে মুড়ি না রেখে সেই জমি চাষ করে অন্য ফসল আবাদের জন্য প্রস্তুত করছেন চাষিরা।

পঞ্চগড় চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গত রোপণ মৌসুমে চিনিকলটির আওতায় জেলায় মোট ৩ হাজার ৮০৫ একর জমিতে আখ চাষ হয়। এই পরিমাণের জমি থেকে চলতি মাড়াই মৌসুমে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন আখ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে গত ১ ডিসেম্বর পঞ্চগড় চিনিকলে মাড়াই হবে না বলে সরকারিভাবে ঘোষণা আসে। কৃষকদের পঞ্চগড়ে উৎপাদিত আখ ঠাকুরগাঁও চিনিকলে সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাড়াই শুরুর পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৩ মেট্রিক টন আখ ঠাকুরগাঁও চিনিকলে সরবরাহ হয়েছে।

পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপক (কৃষি) কাওছার আলী সরকার বলেন, কৃষকদের মধ্যে সার-কীটনাশক, বীজ ও ঋণ দেওয়াও বন্ধ আছে।

ধকরাহাট এলাকার আখচাষি তপন সেন (৩১) বলেন, এবার কাটতে দেরি হওয়ায় জমিতেই আখ শুকিয়ে খড়ি হয়ে যাচ্ছে। বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার কেজি আখ হচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কোনো লাভ থাকছে না। লোকসান দিয়ে আর আখ উৎপাদন তাঁর পক্ষে সম্ভব না বলেও জানান তপন সেন।

আখমাড়াই ঠাকুরগাঁও চিনিকলে হলেও পঞ্চগড়ের চাষিদের পঞ্চগড় চিনিকল থেকেই মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী বলেন, চাষিদের আখ সরবরাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম চলবে। সুতরাং চাষিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।