কাঁচা পাট রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ না করার দাবি

কাঁচা পাট রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ না করা, ক্ষতিগ্রস্ত পাট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা ও রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)।
আজ রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে বিজেএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজেএর চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী। এ সময় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৮৪-৮৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৮-৩০ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হতো। কিন্তু ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিভিন্ন সময়ে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় রপ্তানি সংকুচিত হয়ে বর্তমানে তা ৮-৯ লাখ বেলে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি পাটকলগুলো বন্ধের পর এবার শত বছরের ঐতিহ্য কাঁচা পাট রপ্তানিবাণিজ্যের ওপর কালো ছায়া পড়েছে। গত সপ্তাহে পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সংকট দেখিয়ে কাঁচা পাট রপ্তানি প্রতি মণে ৮০০ টাকা হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে। তারা কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজেএর চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত কাঁচা পাট রয়েছে। চলতি অর্থবছরে পাট অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর দেশে ৯২ দশমিক ৩৮ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতে পারে বলে প্রথমে প্রকাশ করা হয়। পরে বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৪ দশমিক ১৪ লাখ বেল। দেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচা পাটের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ বেল (সরকারি জুট মিলগুলোর চাহিদা প্রায় ১৩ লাখ বেল এবং বেসরকারি জুট ও স্পিনিং মিলগুলোর চাহিদা প্রায় ৪২ লাখ বেল)। কিন্তু সরকারি জুট মিলগুলো বন্ধের কারণে তাদের প্রায় ১৩ লাখ বেল পাটের চাহিদা আর থাকছে না। সব মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচা পাটের চাহিদা এখন সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ বেল। এর ওপর বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি পাটকলগুলো তাদের মজুত করা বিপুল পরিমাণ পুরোনো কাঁচা পাট তাদের নিজস্ব সরবরাহকারীদের পাওনা টাকার পরিবর্তে ফেরত দেওয়ায় সেই পাটও বাজারে চলে আসবে। ফলে এ বছর প্রায় ৪০ লাখ বেল কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে।
শেখ সৈয়দ আলী আরও বলেন, রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হলে কাঁচা পাট রপ্তানি আবার মুখ থুবড়ে পড়বে। এতে বাজারে পাটের দাম কমে যাবে এবং একই সঙ্গে চাষি ও রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষক পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আগামীতে পাট চাষে উৎসাহ হারাবেন। এ ছাড়া কাঁচা পাট রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বেন।

অন্যদিকে ব্যবসার ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে যেটুকু কাঁচা পাটের আন্তর্জাতিক বাজার আছে, তা–ও আর থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সব ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাতের জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু রপ্তানিবাণিজ্যে নিয়োজিত শতভাগ রপ্তানিমুখী ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা পাট রপ্তানি খাত এ আর্থিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া এ রপ্তানি খাত কখনো রপ্তানি প্রণোদনা পায়নি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ না করা, ক্ষতিগ্রস্ত পাট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা ও রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।