কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল আবারও বন্ধ

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট। নাব্যতাসংকটে এখান থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌরুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচলফাইল ছবি

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। নৌ-চ্যালেনমুখে পরপর তিনটি ফেরি ডুবোচরে আটকে পড়ায় আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার পর থেকে ফেরি চলাচল সাময়িক স্থগিত রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, হঠাৎ ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে কয়েক শ যানবাহন। যাত্রীরা কোনোমতে লঞ্চ ও স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও যানবাহনগুলো বিকল্প নৌপথ হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ ব্যবহার করছে। অনেক যানবাহনের চালক এ পথে না ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন পূর্বের গন্তব্যে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ঘাট সূত্র জানায়, নৌপথে বর্তমানে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। আজ ভোরে উভয় ঘাট থেকে ৫টি ফেরি চলাচল শুরু করে। এর মধ্যে তিনটি ছোট ও দুটি মাঝারি আকারের কে-টাইপ ফেরি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিমুলিয়া থেকে স্বল্পসংখ্যক যানবাহন নিয়ে ছেড়ে আসা কাকলি ও ফরিদপুর নামের দুটি ফেরি নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর চায়না নৌ-চ্যানেলের কাছাকাছি এলে ডুবোচরে আটকে যায়। ছোট এই ফেরি দুটি কিছু সময় চেষ্টা চালিয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পৌঁছায়। এরপর বেলা ১১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা কিশোরী নামে আরও একটি ফেরি নৌ-চ্যানেলে সৃষ্টি হওয়া ডুবোচরে আটকে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফেরিটি দুপুর ২টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসে। নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে উভয় ঘাট থেকে ফেরি চলাচল সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ।

নৌপথে ভয়াবহ ডুবোচর থাকায় কোনো ফেরি চলতে পারছে না। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার পর থেকে সব ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পদ্মা সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের আগে ও পরে।

জানতে চাইলে কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌপথে ভয়াবহ ডুবোচর থাকায় কোনো ফেরি চলতে পারছে না। দুপুর সাড়ে ৩টার পর থেকে সব ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পদ্মা সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের আগে ও পরে। এই চায়না চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলতে গিয়ে প্রায়ই আমাদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।’

ঘাটের একাধিক সূত্র জানায়, আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে এ নৌপথে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্রোত ও নাব্যতা-সংকটের জন্য প্রায় দুই মাস ধরে রাতে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। ৩ সেপ্টেম্বর নাব্যতা-সংকটের কারণে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। টানা ৯ দিন খনন করে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের নৌ-চ্যানেলটি সচল করলে তিন দিন স্বল্প পরিসরে ফেরি চলে। আবার দ্বিতীয় দফায় ফেরি বন্ধ হয়। তৃতীয় দফায় ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর পর্যন্ত ফেরি চালানোর পর নাব্যতা-সংকটে অচল হয়ে যায় ঘাট। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল ফেরি। মধ্যখানে ১০ দিন ছোট পাঁচটি ফেরি চলে। ২৭ সেপ্টেম্বর আবার বন্ধ হয় ফেরি চলাচল। অক্টোবর মাসের প্রথম দুই দিনও একই সমস্যায় বন্ধ থাকে ফেরি চলাচল।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চ্যানেলে পানি কমে যাওয়া ও পানিতে ভেসে আসা প্রচুর পলির কারণেই মূলত ডুবোচরের সৃষ্টি। আজ শিমুলিয়া থেকে ছাড়া তিনটি ফেরিই ডুবোচরে আটকে যায়। আটকে যাওয়ার ওই স্থানে সারা রাত ড্রেজিং করে বালু কাটা হবে। আশা করছি সকাল থেকে ফেরি চলতে পারবে।’

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ ফেরি বন্ধ হয়ে পড়ায় বেশ কিছু যানবাহন উভয় ঘাটের সংযোগ সড়ক ও টার্মিনালে আটকা পড়েছে। পারাপারের অপেক্ষায় ২০০-এর মতো পণ্যবাহী ট্রাক ও অর্ধশত ছোট গাড়ি ঘাটে এখনো আটকা আছে। শিমুলিয়া ঘাটেও যানবাহনের একই চাপ রয়েছে।